ভারতের জাতির পিতা বলে গণ্য মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী পুরো বিশ্বে অহিংসার এক মূর্ত প্রতীক। তিনি পুরো বিশ্বকে দেখিয়েছেন কিভাবে অহিংসার পথে অবিচল থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করে নেয়া যায়। লন্ডনে ব্যারিস্টারি শিখে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে নিজ দেশে ফিরে এসে ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটান গান্ধী। তাঁর বিচিত্র এই জীবনে রয়েছে নানা অজানা, অবাক করা ঘটনা। আজকে এমনই ১০টি অবাক করা তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।
১. মহাত্মা উপাধি লাভঃ
১৯১৪ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘মহাত্মা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তার অহিংস সংগ্রামের কারণে তাকে এই উপাধিটি দেন রবি ঠাকুর।
২. দুবার বিশ্ব প্রদক্ষিণের সমান হাটাঃ
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে গান্ধী দৈনিক ১৮ কি.মি করে হাটতেন। ১৯১৩-১৯৩৮ সাল পর্যন্ত গান্ধী প্রায় ৭৯,০০০ কি.মি-এর কাছাকাছি হেটেছিলেন। যা পায়ে হেটে পুরো পৃথিবীকে দুইবার প্রদক্ষিণ করার সমান।
৩. ধুমপায়ী ও মাংসখেকো গান্ধীঃ
নিজের আত্মজীবনী “My Experiments With Truth”-এ নিজের জীবনের নানা গোপন কথা বলেছেন গান্ধী। এসকল অজানা তথ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল তার ধুমপান ও মাংস খাওয়ার কথা। নিজের বড় ভাইয়ের অনুকরণ করে গান্ধীও কিছুদিন ধুমপান করেছিলেন। কিন্তু তার কাছে ধুমপান করাটা অরুচিকর মনে হওয়ায় তিনি তা ছেড়ে দেন। আর এক মুসলিম বন্ধুর সাথে মাংস খেয়েছিলেন গান্ধী, কারণ তার তখন মনে হয়েছিল যে মাংস খায় বলেই ইংরেজরা ভারতীয়দের উপর শাসন করতে পারছে।
৪. আইনজীবি হিসেবে ব্যর্থতাঃ
এই মহান নেতা আইনজীবী হিসেবে খুব একটা সফল হতে পারেননি। শোনা যায় যে প্রতিপক্ষকে পাল্টা প্রশ্ন করার ব্যাপারে খুব একটা পটু ছিলেন না গান্ধী। বিচারকের সামনে কথা বলতেও নাকি অনেক সময় আটকে যেতেন গান্ধী।
৫. ব্রিটিশ আর্মিতে যোগ দেয়াঃ
দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানকালে গান্ধী জুলুর যুদ্ধে আহতদের সেবা দেয়ার জন্য স্বেচ্ছায় ব্রিটিশ আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন। বোয়ের যুদ্ধে একজন স্ট্রেচার বাহক হিসেবে কাজ করেছেন ব্রিটিশ আর্মিতে। এছাড়াও ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে গান্ধী ব্রিটিশদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।
৬. হিটলারকে পাঠানো চিঠিঃ
১৯৩৯ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে যুদ্ধ না জড়ানোর আকুতি জানিয়ে হিটলারের কাছে চিঠি পাঠান গান্ধী। চিঠিতে তিনি হিটলারকে বন্ধু বলে অভিহিত করেন এবং অহিংসার পথে আসতে আহ্বান জানান। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার চিঠিটি বাজেয়াপ্ত করে ফেলায় চিঠিটি কখনো হিটলারের কাছে পৌছায় নি।
৭. পাঁচবার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনিত হওয়াঃ
অহিংসার পথে আজীবন আন্দোলন করে যাওয়া মহাত্মা গান্ধী কখনো শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাননি। তিনি মোট ৫ বার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনিত হয়েছিলেন। যার মধ্যে ১৯৪৮ সালে তিনিই পেতে যাচ্ছিলেন পুরস্কারটি। কিন্তু পুরস্কারপ্রাপ্তির আগেই সেইবছর আততায়ীর হাতে মারা যান তিনি। মরণোত্তর নোবেল পুরস্কার দেয়ার প্রচলন না থাকায় গান্ধীকে তাই নোবেল পুরস্কার দেয়া সম্ভব হয়নি। তার সম্মানে সেইবছর নোবেল কর্তৃপক্ষ শান্তিতে কাউকে নোবেল পুরস্কার দেয় নি।
৮. ব্রিটিশদের দ্বারা সম্মানিত গান্ধীঃ
গান্ধীর মৃত্যুর ২১ বছর পর তাঁর শততম জন্মবার্ষিকীতে ব্রিটিশ সরকার তাঁর সম্মানে ডাকটিকেট বের করে। জীবিত অবস্থায় ব্রিটিশ সরকারের সবথেকে বড় শত্রুকে ব্রিটিশ সরকার মৃত্যুর পরে তাঁর আদর্শের জন্য সম্মানিত করে।
৯. বিশ্বের সবথেকে দামী চরকাঃ
২০১৩-এর নভেম্বরে গান্ধীর ব্যবহৃত একটি চরকা নিলামে এক লক্ষ দশ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়। পুনেতে কারারুদ্ধ থাকা অবস্থায় এই চরকাটি ব্যবহার করতেন গান্ধী।
১০. রবীন্দ্রনাথের ভাগনীর সাথে তাঁর বিতর্কিত সম্পর্কঃ
১৯১৯ সালের দিকে গান্ধীর সাথে পরিচয় হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগনী সরলা দেবী চৌধুরানীর। ৪৭ বছর বয়সী সরলা দেবী, যিনি কিনা ছিলেন একজন সমাজকর্মী ও ব্রিটিশদের বিরোধী আন্দোলনকারী, খুব দ্রুতই গান্ধীর খুব প্রিয় একজন হয়ে উঠেন। গান্ধী তাকে নিজের ‘আত্মিক স্ত্রী(Spiritual Wife)’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতা গান্ধীর পরিবার ও কাছের মানুষদের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাড়ালে গান্ধী ১৯২০ সালের পর থেকে সরলা দেবীর সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেন।