বলা হয়ে থাকে মাতৃত্বের স্বাদ না পাওয়া পর্যন্ত নারী জীবন অপূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু এমন অনেক নারী রয়েছেন যারা নানা শারীরিক সমস্যার কারণে সন্তান লাভের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত থেকে যান। কিন্তু বর্তমানের চিকিৎসাবিজ্ঞানের অবদানে তাদের মধ্যে অনেকেই এখন সন্তান প্রসবের সাধারণ সময় থেকেও আরো অনেক পরে সন্তান জন্ম দিতে পারছেন।
রেকর্ড বই অনুসারে সবথেকে বেশি বয়সে মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া ৫ জন নারীর কথা আজ আপনাদের জানাব।
৫.আদ্রিয়ানা ইলিয়েস্কোঃ
বুখারেস্ট, রোমানিয়ার অধিবাসী আদ্রিয়ানা ২০০৫ সালের ১৬ জানুয়ারি জন্ম দেন তার কন্যা এলিজা মারিয়াকে। এলিজার জন্মের সময় আদ্রিয়ানার বয়স ছিল ৬৬বছর। বহু বছর ধরে গর্ভধারণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। প্রায় ৯ বছর আই.ভি.এফ চিকিৎসার ফসল ছিল তার এই সন্তান লাভ। পেশায় একজন অধ্যাপক, আদ্রিয়ানা তার ১৩ বছর বয়সী কন্যার সাথে বুখারেস্টেই বাস করছেন।
৪.মারিয়া দেল কারমেন বুসাদা দে লারা:
স্পেনের অধিবাসী মারিয়া সন্তান লাভের আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস শহরে। সেখানে ডাক্তারদের কাছে নিজের আসল বয়স লুকিয়ে আই.ভি.এফ চিকিৎসা নেন মারিয়া। ২০০৬ সালের ২৯শে ডিসেম্বর ৬৬ বছর বয়সে যমজ পুত্র সন্তানের মা হন তিনি। কিন্তু তারপরই তার থলের বিড়াল বের হয়ে আসে। তার বয়স লুকানোর ব্যাপার জানাজানি হয়ে গেলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে তার সমালোচনা করা হয়। কিন্তু নিজের মা হওয়ার প্রবল ইচ্ছার কারণেই তাকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে বলে আত্মপক্ষের সাফাই দেন মারিয়া। কিন্তু মারিয়ার দুর্ভাগ্য, যে মাতৃত্বের স্বাদ খুব বেশিদিন ভোগ করতে পারেননি তিনি। ২০০৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
৩.ওমকারি পানওয়ার:
তালিকার অবশিষ্ট তিনজন বৃদ্ধা মায়ের মধ্যে একটি জিনিসের মিল রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই ভারতের অধিবাসী।
ওমকারি পানওয়ার ভারতের উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। তালিকার অন্য দুই মায়ের মত তিনি নিঃসন্তান ছিলেন না। তার পূর্ণ বয়স্ক দুইটি কন্যা সন্তান এবং একাধিক নাতি-নাতনিও ছিল। কিন্তু তারপরও পুত্র সন্তানের আশায় তিনি তার স্বামীর সহযোগিতায় আই.ভি.এফ চিকিৎসা নেয়া শুরু করেন। চিকিৎসার খরচ মেটাবার জন্য তার স্বামী নিজের খামারের মহিষ, জমি বিক্রি করেন, নিজের সারা জীবনের সঞ্চয় ব্যয় করে দেন। ২০০৮ সালের ২৭ জুন যমজ পুত্র ও কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ওমকারি।
৪.রাজো দেবী লোহান:
ভারতের এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা রাজো দেবী ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে আই.ভি.এফ পদ্ধতির সাহায্যে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। আই.ভি.এফ চিকিৎসা নিতে গিয়ে মৃত্যুর কাছাকছি চলে গিয়েছিলেন রাজো, কিন্তু সন্তান জন্মের পর সেই কষ্টের কথা ভুলে যান তিনি। ২০১২ সালে এক ইন্টারভিউতে নিজের কন্যা সন্তানের জন্যই নানা অসুখে জর্জরিত থাকা সত্ত্বেও তিনি বেঁচে আছেন বলে জানান। আলেয়া গ্রামে নিজের কন্যা নবীনকে নিয়ে ভালোই আছেন রাজো দেবী।
৫.দলজিন্দর কৌর:
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের ১৯ তারিখে ৭২ বছর বয়সে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে বিশ্ব মিডিয়ার পাদপ্রদীপে চলে এসেছিলেন ভারতের আম্রিতসার শহরের নিবাসী দলজিন্দর কৌর। বিবাহিত জীবনের প্রায় অর্ধ শতক অতিক্রম করার পর সন্তান লাভ করে দলজিন্দর-মহিন্দর দম্পত্তি। দুই বছর আই.ভি.এফ চিকিৎসা নেয়ার পরে গর্ভধারণ করেন দলজিন্দর। কিন্তু এত বৃদ্ধ বয়সে আই.ভি.এফ চিকিৎসা দেয়ায় হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের সমালোচনাও করেন অনেকে। নিজের পুত্র আরমানকে নিয়ে খুশিতে দিন কাটাচ্ছে দলজিন্দর- মহিন্দর দম্পত্তি।