প্রিজন ব্রেক (সিজন ১)
ডিরেক্টরঃ গাই ফেরল্যান্ড
imdb: ৮.৪
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৯.২
আমরা সকলেই এমন গল্প পড়েছি অথবা এমন চলচ্চিত্র বা নাটক দেখেছি যেখানে অপরাধীরা প্রিজন বা কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। এই অতি পরিচিত, গৎবাধা, পুরানো ফর্মুলাকে নতুন আঙ্গিকে ও সুনিপনভাবে তুলে ধরা হয়েছে মার্কিন টেলিভিশন সিরিজ প্রিজন ব্রেক-এ।
মাইকেল স্কোফিল্ড গল্পের মূল নায়ক। কারাগার থেকে পালানোর মাস্টার মাইন্ড। মাইকেল স্কোফিল্ড একাধারে একজন ম্যাথমেটিক্যাল (জ্যামিতির) জিনিয়াস ও একজন স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার (প্রথম দিন দেখার পর থেকে আমার আইডল)।
লিঙ্কন বুরোস মাইকেল স্কোফিল্ডের ভাই। প্রেসিডেন্টের ভাইকে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি। লিঙ্কন বরাবরই দাবি করতে থাকে যে সে নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু তার কাছে নিজের নির্দোষ হওয়ার কোনো প্রমাণ না থাকায় আদালতের চোখে সে দোষী সাব্যস্ত হয়। আদালতের কাছে সুবিচার না পেলে মাইকেল তার বড় ভাইকে বাঁচানোর জন্য এক অভাবনীয় পরিকল্পনা হাতে নেয়। সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে নিজেই তার ভাইকে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে আসবে।
মাইকেলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই তাকে প্রবেশ করতে হবে ফক্স রিভার কারাগারে, যেখানে তার ভাই বন্দী আছে। সেজন্য সে একটি ব্যাংক ডাকাতি করতে যায় এবং ইচ্ছা করেই ধরা দেয় পুলিশের হাতে। তাকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় ফক্স রিভার কারাগারে।
পালানোর প্লানটি সত্যিই রোমাঞ্চকর। রিভার ফক্স কারাগারের নকশা মাইকেল তার সমস্ত শরীরজুড়ে ট্যাটু করে নিয়েছিল। কারাগারে প্রবেশের পর থেকে তাকে কোথায় কি করতে হবে, কিভাবে সে ধীরে ধীরে তার ভাইকে নিয়ে কারাগার থেকে পালাবে তার সমস্ত পরিকল্পনা যেভাবে মাইকেল করে রেখেছিল তা এক কথায় অসাধারন। কারাগারে প্রবেশ করার পর থেকেই সে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা শুরু করে দিল।
কিন্তু কারাগারে প্রবেশ করা যত সহজ, সেখান থেকে বের হওয়া তার থেকে শতগুণ কঠিন। পারফেক্ট প্লান বলতে হয়ত কিছু নেই। কারাগারে মাইকেল ও তার ভাইকে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। সেখানে তাকে প্রায়ই মৃত্যর মুখোমুখি হয়। এমনকি তার একপায়ের আঙ্গুল কেটে ফেলা হয় (এক জন তার ভাইকে বাঁচানোর জন্য এত কিছু করবে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য)। তাদের মূল প্রতিপক্ষ ছিল ‘টি-ব্যাগ’ ব্যাগওয়েল নামের এক কয়েদী ও সিক্রেট সার্ভিস অফিসার পল কেলারম্যান।
বাইরে থেকে দেখলে গল্পটি শুধুমাত্র একটি কারাগার থেকে পালানোর গল্প মনে হতে পারে। কিন্তু সত্যি বলতে গল্পটি হচ্ছে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসার গল্প। নিজের ভাইকে বাঁচাতে যেখানে এক ভাই নিজের সবকিছু বাজি রাখতেও পিছপা হয় না।
প্রথম সিজনে-এ ২২ টি পর্ব রয়েছে। প্রথমে প্রযোজকদের পরিকল্পনা ছিল যে তারা শুধু একটি সিজন করবেন। কিন্তু প্রথম সিজনটি তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ায় পরবর্তীতে আরো ৪টি সিজন বানানো হয়। প্রথম সিজনের প্রত্যেক এপিসোডই উত্তেজনায় ভরপুর। এক মিনিটের জন্যও মনে হবে না যে আমার সময় নষ্ট হচ্ছে। সব কিছুই গল্পের প্রয়োজনে এত সুন্দরভাবে তৈরি করা হয়েছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আপনার যদি অপরাধ ,থ্রিলার ঘরানার টিভি সিরিজ ভাল লাগে তাহলে অবশ্যই এটি আপনার জন্য। আশা করি দেখবেন, ভাল লাগবে।