যদি প্রশ্ন করা হয় বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক কি? আমরা নির্দ্বিধায় বলবো “করোনা ভাইরাস”। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস এখন এক বৈশ্বিক আতঙ্ক। গ্রিক শব্দ করোনে মানে মুকুট এবং লাতিন শব্দ করোনা মানে মালা থেকেই করোনা ভাইরাস পরিবারের নামটি এসেছে। ১৯৬০ সালে খুঁজে পাওয়া এ ভাইরাস পরিবারে দুই শতাধিক সদস্য আছে, তবে মানুষের ভেতর সংক্রমণের জন্য আগে ছয়টি ভাইরাস চিহ্নিত হয়েছিল। ২০১৯ সালে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া আলোচিত এ ‘নভেল করোনা ভাইরাস’ (কোভিড-১৯) হলো মানুষে সংক্রমিত হওয়া করোনার সপ্তম প্রজাতি।
আক্রান্ত মানুষের মৃত্যু ও দ্রুত সংক্রমণের পরিসংখ্যান বেড়েই চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বের ১৯৮ টি দেশের ৪ লক্ষ ৭২ হাজার মানুষ এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ২২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি আরো ভয়ানক অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই এই মহামারি ভাইরাসের ভয়াবহ প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের গ্রহন করতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতা। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও সাবধানতাকেই আপাতত সংক্রমণ থেকে বাঁচার প্রাথমিক উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম যেমন মাস্ক, হাত মোজা পরিধান এবং হাত, মুখ, পা যথাযথভাবে পরিস্কারের মাধ্যমে আমরা পারি নিজেদেরকে করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, করোনা ভাইরাস কি শুধু মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে? না, এই মহামারি ভাইরাসের ফলে আমাদের বৈশ্বিক পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে এবং ভবিষ্যতে এর পরিনাম হবে ভয়ানক।
গত ৫০ বছরে আমরা বিশ্বব্যাপী নানা বিপজ্জনক রোগসংক্রমণ ও মহামারী ছড়িয়ে যেতে দেখেছি। এ অবস্থা আরো জটিল হচ্ছে নৃশংস নগরায়ণ ও দুনিয়াজুড়ে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা চুরমার হয়ে যাওয়ার ফলে। এমনিতেই জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে টলছে পৃথিবী। বাড়ছে দূষণ ও দাবদাহ। গলছে বরফ ও হিমবাহ। নানা গবেষণায় প্রমাণ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দুনিয়াজুড়ে জাগছে নানা প্রাণঘাতী জীবাণুরা।বর্তমানে কোভিড-১৯ জনিত কারণে পৃথিবীর মানুষ চরম আতংকের সাথে দিন কাটাচ্ছেন। এই ভাইরাস বনভূমির জীব বৈচিত্রের ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তা এ মুহূর্তে বলা কঠিন।
মানুষ ও প্রকৃতি উভয়েই একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। প্রকৃতির ওপর অত্যাচার করলে তার ফল কখনো ভাল হয় না। সুতরাং, আমাদের প্রিয় পরিবেশ মুক্ত থাকুক দূষণ থেকে আর কোভিড-১৯ এর কালো থাবা থেকে মুক্তি পেয়ে আমরা যেন আবার ফিরে পাই আমাদের চিরচেনা পৃথিবী।
লেখক:
ফারজানা আক্তার
শিক্ষার্থী, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।