রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্তিম ধাপের কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। ৩২টি দল নিয়ে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টে এখন দল বাকি আছে মাত্র ৪টি। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া, এই চারটি দলের মধ্যে যেকোনো একটি দল হতে চলেছে পরবর্তী বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, জার্মানির মত ফুটবল পরাশক্তিদের পরাজিত করে তারা জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। ১৫ জুলাই তাদের মধ্য থেকেই যেকোনো একটি দল হতে চলেছে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
মূল শিরোপার পাশাপাশি ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের জন্য একাধিক পুরস্কার দেয়া হয় প্রতিটি বিশ্বকাপে। এই পুরস্কারগুলোর মধ্যে সবথেকে মূল্যবান হচ্ছে গোল্ডেন বল, যা দেয়া হয় টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠ ফুটবলারকে। মেসি, রোনালদো, নেইমার এর মত বড় নামগুলো টুর্নামেন্ট থেকে আগেই বিদায় নিয়ে নিয়েছেন। তাই খুব সম্ভবত সেমিফাইনালের চারটি দলের মধ্যে যেকোনো একজনের হাতেই উঠছে এবারের আসরের গোল্ডেন বল। কোন কোন খেলোয়াড়ের সম্ভাবনা রয়েছে এবারের গোল্ডেন বল জিতবার, চলুন দেখে আসা যাক।
১.লুকা মদ্রিচঃ
ক্রোয়েশিয়ার সোনালী প্রজন্মের প্রধান সেনানী লুকা মড্রিচ। রাকিতিচ, মানজুকিচ, কোভাচিচদের মত প্রতিভাবান ফুটবলারদের মধ্যেও আলাদা করে নজর কাড়েন মদ্রিচ। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৩টি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা মদ্রিচ ক্রোয়েশিয়া দলের আক্রমণভাগের হৃদপিণ্ড। তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে ২টি গোল ও ১টি এসিস্ট করা মদ্রিচ ক্রোয়েশিয়ার খেলা ৫টি ম্যাচের মধ্যে ৩ বার ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছেন, যা টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ। ক্রোয়েশিয়াকে তাদের ফুটবল ইতিহাসে ২য় বারের মত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তুলে আনা মদ্রিচের সামনে সুযোগ আছে নিজের দলকে শিরোপার আরো কাছে নিয়ে যাওয়ার ও প্রথম ক্রোয়েশিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জিতবার।
২.কিলিয়ান এমবাপ্পেঃ
মাত্র ১৯ বছর বয়সেই বিশ্বকাপ মাতাচ্ছেন ফ্রান্সের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় কিলিয়ান এমবাপ্পে। বিশ্বকাপে ৩টি গোল করা এমবাপ্পে তার গতি দিয়ে বিপক্ষ দলকে পরাস্ত করে আসছেন। ২য় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিপক্ষের ম্যাচে এমবাপ্পের গতির কাছে বারবার পরাস্ত হয় আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ। সেই ম্যাচে ২টি গোল করে পেলের পরে বিশ্বকাপের সবথেকে কম বয়সে একই ম্যাচে দুটি গোল করার রেকর্ড গড়েন এমবাপ্পে । গ্রিজম্যান, পগবা, জিরুড দিয়ে সাজানো ফ্রান্সের আক্রমণভাগের সাথে এমবাপ্পের দুর্বার গতি ফ্রান্সকে করে তোলেছে অপ্রতিরোধ্য। শুধু গোল করার ক্ষমতা না, তার উপস্থিতিই বিপক্ষ দলকে ভোগাতে যথেষ্ট। এমবাপ্পের সামনে তাই সুযোগ রয়েছে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই গোল্ডেন বল জিতে মেসি, জিদান, ম্যারাডোনার কাতারে জায়গা করে নেয়ার।
৩.হ্যারি কেনঃ
ইংল্যান্ড বরাবরই শক্তিশালি দল নিয়ে আসে বিশ্বকাপে। কিন্তু প্রতিবারই নক আউট পর্বে এসেই তারা বিদায় নিয়ে নেয় টুর্নামেন্ট থেকে। গত ২৮ বছর থেকে এভাবেই চলে আসছিল ইংলিশ ফুটবল। কিন্তু ২০১৮ সালে হ্যারি কেন-এর নেতৃত্বে ইংল্যান্ড তার ২৮ বছরের ব্যর্থতা কাটিয়ে আবারো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কোয়ালিফাই করেছে। হ্যারি কেন-এর নেতৃত্বে এক ভিন্ন আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলছে ইংল্যান্ড। এখন পর্যন্ত ৬টি গোল করে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট পাবার তালিকায় সবার আগে রয়েছেন হ্যারি কেন। ইংল্যান্ডকে নিজেদের ২য় বিশ্বকাপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসা এই অধিনায়ক এখন গোল্ডেন বল জিতবার অন্যতম দাবিদার হয়ে সামনে আসছেন।
৪.এডেন হ্যাজার্ডঃ
চেলসির অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ইডেন হ্যাজার্ড একজন প্রতিভাধর খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু মেসি, রোনালদো, নেইমারদের মত কোনো বড় জায়গাতে নিজের নৈপুণ্য দেখাতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে আমরা দেখতে পারছি এক ভিন্ন হ্যাজার্ডকে। প্রথম ম্যাচ থেকেই প্রতিপক্ষের অর্ধে নিজের পায়ের কারিকুরি দিয়ে বিপক্ষ দলের ডিফেন্সকে নাজেহাল করে দিচ্ছেন। ডি ব্রুইন ও লুকাকুর সাথে গড়ে তুলেছেন এক ভয়ঙ্কর ত্রয়ী যারা মুহূর্তের মধ্যে কাউন্টার অ্যাটাকে বল পাঠিয়ে দিতে পারে প্রতিপক্ষের জালে। টুর্নামেন্টে ৪ ম্যাচে ২টি গোল ও ২টি অ্যাসিস্ট করেছেন হ্যাজার্ড। বেলজিয়াম দলের আক্রমণভাগের নেতৃত্ব দেয়া হ্যাজার্ডের সামনে এখন সুযোগ আছে নিজের দেশের জন্য প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি গোল্ডেন বল জিতে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় নিজের জায়গাকে পাকাপোক্ত করার।