বিশ্বকাপ টিম প্রিভিউঃ জার্মানি

বর্তমানের বিশ্বচ্যাম্পিয়ান এবং ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবথেকে ধারাবাহিক দল হচ্ছে জার্মানি। ১৮ বার বিশ্বকাপের আসরে অংশগ্রহণ করা জার্মানি চারবার বিশ্বকাপ জয় করার পাশাপাশি টুর্নামেন্টে ২য় ও ৩য় স্থান অধিকার করেছে আরো চারবার করে। ২০০২ থেকে শুরু করে ২০১৪ পর্যন্ত টানা ৪টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে জার্মান দলটি। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর বাস্তিয়ান সোয়ান্সটাইগার, মিরোস্লাভ ক্লোসা, দলের অধিনায়ক ফিলিপ লাম-এর মত অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরা আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান। তারপর কোচ জোয়াকিম লো পূর্বের নির্ভরযোগ্যদের পাশে তরুণ তুর্কীদের নিয়ে জার্মান দলকে আবারো নতুনভাবে গড়ে তুলেছেন। ২০১৭ সালের কনফেডারেশনস কাপজয়ী দলটি তাই বিশ্বকাপেও জয়ের লক্ষ্য নিয়েই শুরু করবে।

স্কোয়াডঃ

বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করার পূর্বেই জার্মান দল নিয়ে ভক্ত সমর্থকদের মাঝে নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল। কাকে দলে নিবেন লো? আসলে জার্মান কোচ বিশ্বকাপের দল বাছাইয়ের সময়ে পড়েছিলেন এক মধুর সমস্যায়। বর্তমানে জার্মান প্রতিভা এতই বেশি যে শুধু ২৩ সদস্যের দলে সবার জায়গা পাওয়া অসম্ভব। তাই লো যখন বিশ্বকাপের জন্য ২৩ সদস্যের জার্মান দল ঘোষণা করেন তখন অনেক সমর্থকরাই তাদের প্রিয় খেলোয়াড়দের দলে না দেখতে পেয়ে হতাশ হয়ে পরে। কিন্তু জোয়াকিম লো-এর বেছে নেয়া ৩ জন গোলকিপার, ৮ জন ডিফেন্ডার, ৭ জন মিডফিল্ডার ও ৫ জন স্ট্রাইকার নিয়ে সাজানো স্কোয়াডকে সবাই একবাক্যে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা স্কোয়াড বলে মেনে নিচ্ছে। চলুন এক নজরে দেখে নেই জার্মানির বিশ্বকাপ স্কোয়াডটি।

গোলরক্ষক

  • ম্যানুয়েল নয়্যার – অধিনায়ক (বায়ার্ন মিউনিখ)
  • মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন (বার্সেলোনা)
  • কেভিন ট্র্যাপ (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)

ডিফেন্ডার

  • জশুয়া কিমিচ (বায়ার্ন মিউনিখ)
  • ম্যাট হামেলস (বায়ার্ন মিউনিখ)
  • নিকলাস সুলে (বায়ার্ন মিউনিখ)
  • জেরোম বোয়েটাং (বায়ার্ন মিউনিখ)
  • ম্যাথিয়াস জিন্টার (বরুশিয়া মনশেনগ্ল্যাডবাখ)
  • আন্তোনিও রুডিগার (চেলসি)
  • মারভিন প্ল্যাটেনহার্ট (হার্থা বার্লিন)
  • জোনাস হেক্টর (কোলন)

মিডফিল্ডার

  • টনি ক্রুস (রিয়াল মাদ্রিদ)
  • টমাস মুলার (বায়ার্ন মিউনিখ)
  • মেসুত ওজিল (আর্সেনাল)
  • মার্কো রয়েস (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড)
  • জুলিয়ান ড্র্যাক্সলার (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)
  • সামি খেদিরা (জুভেন্টাস)
  • লিওন গোরেৎজকা (বায়ার্ন মিউনিখ)
  • সেবাস্তিয়ান রুডি (বায়ার্ন মিউনিখ)
  • জুলিয়ান ব্র্যান্ট (বায়ার লেভারকুজেন)
  • ইলকায় গুন্ডোগান (ম্যানচেস্টার সিটি)

স্ট্রাইকার

  • টিমো ওয়ার্নার (র‍্যাসেনবলস্পোর্ত লাইপজিগ)
  • মারিও গোমেজ (ভিএফবি স্টুটগার্ট)
ম্যানচেস্টার সিটির লিরয় সানে।

এই দলে জায়গা পাননি ম্যানচেস্টার সিটির লিরয় সানে, আর্সেনালের মুস্তাফি, লিভারপুলের এমেরি চান। গত বিশ্বকাপ ফাইনালের গোলদাতা বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মারিও গোটজে ও একই ক্লাবের আন্দ্রে শুরলেও জায়গা পাননি এবারের বিশ্বকাপ দলে। এদের মধ্যে অবশ্য সদ্য সমাপ্ত প্রিমিয়ার লিগে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় খেতাব পাওয়া লিরয় সানের বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পাওয়াটাই ছিল সবথেকে চমকপ্রদ। সিটির হয়ে মৌসুমজুড়ে চমৎকার খেলা সানের জায়গায় বায়ার লেভারকুজেন-এর জুলিয়ান ব্র্যান্টকে লো তার একাদশে জায়গা দিয়েছেন। মূলত লো-এর বিশ্বকাপ কৌশলে ব্রান্টকে বেশি উপযোগী মনে হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জার্মান কোচ।

 

সম্ভাব্য একাদশঃ

সাধারণত জার্মান দল লো-এর অধীনে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেললেও প্রয়োজনে ভিন্ন কৌশলে দল সাজানোর মত বিকল্প খেলোয়াড় রয়েছে জার্মান দলে। তবু ধারণা করা যাচ্ছে যে টুর্নামেন্টের শুরুতে লো তার পরীক্ষিত কৌশলেই দলকে খেলাবেন।

 

বিশ্বকাপে জার্মানির গোলবার কে সামলাবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা কম হয়নি। গত বিশ্বকাপের সেরা গোলকিপার ম্যানুয়েল নয়্যার প্রায় ১ বছর ধরে ইঞ্জুরিতে থাকায় তার বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। অন্যদিকে বার্সেলোনার গোলকিপার টের স্টেগান-এর তার দলের হয়ে ভালো পারফর্মেন্স তাকে জাতীয় দলের দাবিদার করে তুলেছে। কিন্তু সব সংশয় কাটিয়ে নয়্যার ফিরে এসেছেন দলে ও তাকেই এই বিশ্বকাপে জার্মানির গোলবারের নিচে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেখা যাবে।

জার্মানির সেন্ট্রাল ডিফেন্সে বায়ার্ন মিউনিখের ডিফেন্ডার যুগল ম্যাট হামেলস ও জেরোম বোয়েটাংকে দেখা যাবে। তাদের বিকল্প হিসেবে দলে রয়েছেন চেলসির রুডিগার ও বায়ার্ন মিউনিখের সুলে।

রাইটব্যাক পজিশনে দেখা যাবে বায়ার্ন মিউনিখের জশুয়া কিমিচকে, যাকে ফুটবলবোদ্ধারা পরবর্তী ফিলিপ লাম বলে মনে করছে। তার বিকল্প হিসেবে দলে আছেন বরুশিয়া মনশেনগ্ল্যাডবাখের জিন্টার। আর লেফটব্যাক পজিশনে খেলবেন হেক্টর। আর তার বিকল্প হিসেবে দলে আছেন হার্থা বার্লিনের মারভিন প্ল্যাটেনহার্ট।

এবার আসা যাক মিডফিল্ডে। জার্মানির ২ সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের পজিশনে রিয়াল মাদ্রিদের টনি ক্রুস ও জুভেন্টাসের সামি খেদিরার খেলার সম্ভাবনা প্রবল। তাদের বিকল্প হিসেবে দলে আছেন বায়ার্ন মিউনিখের দুই খেলোয়াড় সেবাস্তিয়ান রুডি ও লেওন গোরেৎজকা এবং ম্যানচেস্টার সিটির ইলকায় গুন্ডোগান। সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের জায়গায় খেলবেন জার্মান দলের আক্রমণভাগের প্রাণ আর্সেনালের মেসুত ওজিল। তাকে সাহায্য করতে দুই প্রান্তে খেলবে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মার্কো রয়েস ও বায়ার্ন মিউনিখের টমাস মুলার। এই দুই পজিশনে বিকল্প হিসেবে দলে আছে বায়ার লেভারকুজেনের জুলিয়ান ব্রান্ট ও পিএসজির ড্রাক্সলার।

একাদশে একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবে লাইপজিগের টিমো ওয়ার্নার অথবা স্টুটগার্টের স্ট্রাইকার মারিও গোমেজ। আবার ইচ্ছা করলে জার্মান কোচ লো টমাস মুলারকেও মিডফিল্ডে না রেখে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাতে পারেন। কিন্তু টুর্নামেন্টের প্রথমদিকে এই দুই স্ট্রাইকারের একজন দিয়েই জার্মানি দল সাজাবে বলে ধারণা করা যায়।

শেষকথাঃ

জার্মানি বরাবরই বিশ্বকাপে ভালো প্রদর্শন করে। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে নির্ভর না করে দল হিসেবে খেলার সুনাম রয়েছে জার্মানির। গত বিশ্বকাপের মত এবারও বিশ্বকাপ জয় করার মত একাদশ রয়েছে তাদের। গত বিশ্বকাপের পর কিছুটা হারিয়ে যাওয়া দলকে আবারো গড়ে তুলেছেন জোয়াকিম লো। ফিফা র‍্যাঙ্কিং-এ তারা আবারো উঠে এসেছে প্রথম স্থানে।

গত বিশ্বকাপে জার্মানি প্রথম ইউরোপিয়ান দল হিসেবে আমেরিকা মহাদেশে বিশ্বকাপ জিতেছিল। আর এই বিশ্বকাপে জার্মানির সামনে সুযোগ বিশ্বকাপ ইতিহাসের তৃতীয় দল হিসেবে নিজেদের শিরোপা ধরে রেখে টানা দুইবার বিশ্বকাপ জয় করা। তার পাশাপাশি এবারের আসরে শিরোপা জয় করলে জার্মানি বিশ্বকাপের সবথেকে সফল দল হিসেবে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ান ব্রাজিলের সাথে একই কাতারে চলে যাবে। কিন্তু এত সব সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জার্মান দলটিকে শিরোপা জয়ের জন্য পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ। তারা কি পারবে তাদের শিরোপা উদ্ধার করতে? প্রশ্নটি এখন সব জার্মান সমর্থকদের মনে।

Post Author: Ashfaq Niloy

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *