বিশ্বকাপ টিম প্রিভিউঃ ব্রাজিল

৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ান ব্রাজিল প্রতিটি বিশ্বকাপে শিরোপার দাবিদার হিসেবেই টুর্নামেন্ট শুরু করে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপও তার ব্যতিক্রম নয়। ২০১৪ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ ব্যবধানে হারার পর ব্রাজিল দল নিজেকে আবারো ভেঙ্গে গড়েছে। বর্তমানে দলে রয়েছে পুরোনো সেনানী থিয়াগো সিলভা, মার্সেলোর পাশাপাশি গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ফিরমিনহোদের তরুণ তুর্কীরা। আর সাথে অবশ্যই আছে ব্রাজিল দলের হৃদপিন্ড নেইমার। কোচ তিতের অধীনে আবারো জোগো বনিতোর ছন্দে খেলতে থাকা এই ব্রাজিল দলকে আটকানো যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্যই হতে চলেছে খুবই মুশকিল।

স্কোয়াডঃ

ব্রাজিল কোচ তিতে অন্য বড় দলগুলোর তুলনায় অনেক আগেই বিশ্বকাপের জন্য ২৩ সদস্যের দল ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দারুণ খেলা খেলোয়াড়দের উপরই আস্থা রেখেছেন তিতে। তিনজন গোলকিপার, আটজন ডিফেন্ডার, সাতজন মিডফিল্ডার ও পাঁচজন স্ট্রাইকার নিয়ে ব্রাজিলের একাদশ। চলুন এক নজরে দেখে আসা যাক স্কোয়াডটিকে।

গোলরক্ষক

  • অ্যালিসন বেকার (এএস রোমা)
  • এডারসন মোরায়েস (ম্যানচেস্টার সিটি)
  • ক্যাসিও রামোস (করিন্থিয়ান্স)

ডিফেন্ডার

  • থিয়াগো সিলভা (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)
  • মারকুইনহোস (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)
  • মিরান্ডা (ইন্টার মিলান)
  • জেরোমেল (গ্রেমিও)
  • ফিলিপে লুইস (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ)
  • মার্সেলো (রিয়াল মাদ্রিদ)
  • দানিলো (ম্যানচেস্টার সিটি)
  • ফ্যাগনার (করিন্থিয়ান্স)

মিডফিল্ডার

  • ফিলিপে কৌতিনহো (বার্সেলোনা)
  • ক্যাসেমিরো (রিয়াল মাদ্রিদ)
  • ফার্নান্দিনহো (ম্যানচেস্টার সিটি)
  • রেনাতো অগাস্তো (বেইজিং গুয়ান)
  • উইলিয়ান (চেলসি)
  • পাওলিনহো (বার্সেলোনা)
  • ফ্রেড (শাখতার দোনেতস্ক)

ফরোয়ার্ড

  • নেইমার জুনিয়র (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)
  • গ্যাব্রিয়েল জেসুস (ম্যানচেস্টার সিটি)
  • রবার্তো ফিরমিনো (লিভারপুল)
  • ডগলাস কস্তা (জুভেন্টাস)
  • টাইসন (শাখতার দোনেতস্ক)

পিএসজি এর তারকা রাইটব্যাক ডানি আলভেজকে ২৩ জলের দলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ফরাসী কাপ ফাইনালে ইঞ্জুরিতে পড়ার কারণে আলভেজ বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে পড়েন। তার জায়গায় দলে জায়গা পান ফিলিপে লুইস। পিএসজির হয়ে খেলার সময়ে নেইমার পায়ের ইঞ্জুরিতে পরলে তার বিশ্বকাপ খেলা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু নেইমার বিশ্বকাপের আগেই মাঠের খেলায় আবার ফিরে এসেছেন।

সম্ভাব্য একাদশঃ

তিতের ব্রাজিল দলের কোচ হিসেবে আসার পর থেকেই ব্রাজিল ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলছে। বিশ্বকাপেও ব্রাজিল একই কৌশলে খেলবে বলে ধারণা করা যায়।

 

এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের গোলবার সামলাবেন রোমার গোলকিপার অ্যালিসন। অ্যালিসঙ্কে বিশ্বের সেরা গোলকিপারদের কাতারে ধরা হয়। গোলপোস্টের নিচে তিতের দ্বিতীয় পছন্দ হলেন ম্যানচেস্টার সিটির এডারসন। সেন্টারব্যাক পজিশনে বাছাইপর্বে তিতের পছন্দের জুটি ছিল মারকুইনহোস ও মিরান্ডা। কিন্তু ব্রাজিল দলের ক্যাপটেন হিসেবে থিয়াগো সিলভার নাম ঘোষণা করায় মনে হচ্ছে তাদের দুইজনের মধ্যে একজনকে নিয়মিত একাদশ থেকে সরে দাড়াতে হতে পারে। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ৩ জুনের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে সিলভার সাথে শুরুর একাদশে দেখা যায় মিরান্ডাকে। বিশ্বকাপেও একই কৌশল দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের সব থেকে বড় ধাক্কা ছিল রাইটব্যাকে ডানি আলভেজকে হারানো। তার অনুপস্থিতিতে করিন্থিয়ান্সের রাটব্যাক ফ্যাগনার একাদশে সুযোগ পাবে। তার বিকল্প হিসেবে দলে ম্যানচেস্টার সিটির রাইটব্যাক দানিলোকে দলে নিয়েছেন তিতে। আর লেফট ব্যাক পজিশনে খেলবে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ান্স লিগ জেতা মার্সেলো। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের লেফটব্যাক ফিলিপে লুইসকে মার্সেলোর বিকল্প হিসেবে দলে রাখা হয়েছে।

এবার ব্রাজিলের মাঝমাঠের দিকে একটু নজর দেয়া যাক। ব্রাজিল দলে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের পজিশনে তিতের প্রথম পছন্দ রিয়াল মাদ্রিদের ক্যাসেমিরো। প্রতিপক্ষের মাঝমাঠের খেলোয়াড়দের ছন্দপতন করানোর জন্য এই পজিশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ক্যাসেমিরোকে সঙ্গ দিবেন বার্সেলোনার পাউলিনহো। ক্লাবের হয়ে অত্যন্ত সফল মৌসুম কাটানো পাউলিনহো একজন আদর্শ বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার। প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে গোলের প্রচেষ্টা করা আবার প্রয়োজনে নিজের ডিফেন্সে নেমে এসে প্রতিপক্ষের থেকে বল ছিনিয়ে নেয়া, দুটি কাজই একইসাথে সফলভাবে করতে সক্ষম এই মিডফিল্ডার। মিডফিল্ডের ৩য় পজিশনের জন্য বেইজিং গুয়ান-এর রেনুতা অগাস্টো ও ম্যানচেস্টার সিটির ফার্নান্দিনহো এর মাঝে তুমুল প্রতিযোগিতা হবে। অগাস্টোকেই এই পজিশনে দেখার সম্ভাবনা বেশি।

এবার আসি ব্রাজিলের মূল শক্তির জায়গা, তাদের আক্রমণভাগ। আক্রমণভাগের নেতৃত্ব থাকবে বাম প্রান্তে খেলা নেইমারের কাঁধে। তার অসাধারণ ফুটবল নৈপুণ্যের উপর ভর করে ব্রাজিল স্বপ্ন দেখছে তাদের হেক্সা জয়ের। ডানপ্রান্তে তাকে সঙ্গ দিবেন বার্সেলোনার কৌতিনহো। আর স্ট্রাইকার পজিশনে খেলবেন ম্যানচেস্টার সিটির গ্যাব্রিয়েল জেসুস। স্ট্রাইকার পজিশনে অবশ্য তাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিবেন লিভারপুলের হয়ে ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটানো ফিরমিনহো। এছাড়াও চেলসির উইলিয়ান, জুভেন্টাসের ডগলাস কস্তা ও শাখতার দোনেতস্কের টাইসনকে আক্রমণভাগের বিকল্প হিসেবে দলে রাখা হয়েছে।

শেষকথাঃ

গত বিশ্বকাপের কলঙ্কমোচন করার জন্য এই ব্রাজিল দলটি বদ্ধপরিকর। কোচ তিতের ব্রাজিল দলের হাল ধরার পর থেকে দিশেহারা সেলেকাওরা যেন নিজেদেরকে আবারো খুঁজে পায়। তিতে আসার আগে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ব্রাজিল নিজ গ্রুপে ৬ নম্বরে ধুঁকছিল। তার অধীনে ব্রাজিল প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপে প্রবেশ করে। বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব শেষে গ্রুপের দ্বিতীয় দল উরুগুয়ে থেকে ব্রাজিলের পয়েন্টের ব্যবধান ছিল ১০। তিতের অধীনে এখন পর্যন্ত ব্রাজিল হেরেছে মাত্র একবার।

নিঃসন্দেহে ব্রাজিল ফুটবলের বর্তমানের সবথেকে বড় বিজ্ঞাপন হচ্ছে নেইমার। বিশ্বসেরা ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেললেও, এই বিশ্বকাপে নেইমারের হাতে রয়েছে কিংবদন্তিতে পরিণত হওয়ার সুযোগ। গত বিশ্বকাপে ইঞ্জুরির কারণে সেমিফাইনালে না খেলতে পারা এখন পর্যন্ত নেইমারের ক্যারিয়ারের সবথেকে বড় অপূর্ণতা। দর্শকসারিতে বসেই নেইমারকে দেখতে হয় ঘরের মাটিতে জার্মান দলের কাছে নিজ দলের এমন অসহায় আত্মসমর্পণ। কিন্তু এবার তার সামনে আবারো সুযোগ এসেছে বিশ্বকাপ জয় করার।

২০১৪ সালের ব্রাজিল থেকে এই ব্রাজিল দলের সবথেকে বড় পার্থক্য হচ্ছে যে সেই ব্রাজিল দল নেইমারের উপর অতি নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের দলে নেইমার ছাড়াও এমন অনেক খেলোয়াড় রয়েছে যারা যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। ব্রাজিল দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়্ ইউরোপের বিখ্যাত ক্লাবের হয়ে খেলছে। তাই তাদের সামর্থ্য নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য অবশ্যই রয়েছে এই ব্রাজিল দলের। এখন দেখার ব্যাপার হচ্ছে ব্রাজিল খেলার মাঠে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারে কিনা।

 

 

Post Author: Ashfaq Niloy

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *