মুকিযে (দি মিরাকেল)
ডিরেক্টরঃমাহসুন কিরমিযিগুল
স্ক্রিন প্লেঃমাহসুন কিরমিযিগুল
Imdb রেটিংঃ৭.৬
রেটিং(ব্যাক্তিগত): ৯
আপনাকে যদি এমন কোন জায়গায় পাঠানো হয় কাজের জন্য যেখানে কোনো গাড়ি চলে না; পাহাড়, পর্বত, নদী পেরিয়ে সেখানে যেতে হবে এবং পরিবার ছাড়া থাকতে হবে আপনি কি সেখানে যাবেন? আর গেলেও আপনি কতদিন সেই জায়গাতে টিকে থাকতে পারবেন? এক মাস,দুই মাস না হয় এক বছর। কতদিন এমন কোনো জায়গায় থাকা সম্ভব ???
মাহির ইয়িল্মায। এক জন সরকারি শিক্ষক। তাকে এমন যায়গায় যেতে বলা হয়েছে যেখানে ভাল পানির ব্যবস্থা, রাস্তা, রেডিও কিছুই নেই। তিনদিনে এক বার গাড়ি আসে। চিঠি পাঠালে আট মাস পর উত্তর পাওয়া যায়। যেখানে গত ত্রিশ বছরে কোন শিক্ষক আসেনি। তাকে পাহাড়, নদী বলতে গেলে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে যাযাকি নামক গ্রামে যেতে বলা হয় শিক্ষকতা করানোর জন্য।
তার গ্রামে প্রবেশের ঘটনাটা মজার। গ্রামের সবাই তাকে আগন্তক ভেবে বন্দুক তাক করে ।মাহির যখন শিক্ষক পরিচয় দেয় সবাই মহা খুশিতে আমন্ত্রন জানায় কারন তাদের গ্রামে ত্রিশ বছরে কোন শিক্ষক আসেনি।
দাভুত এলচি গ্রাম প্রধান। তিনি যখন বললেন যে গ্রামে কোন স্কুল নেই মাহির প্রায় আশা ছেড়ে দেয়। কিন্তু সে একজন দৃঢ় প্রত্যয়ী মানুষ ।মাহির তার স্ত্রীর কাছ থেকে মিথ্যা বলে নিজ টাকায় স্কুল বানায়। তার একটা মাত্র শর্ত স্কুলে ছেলেদের সাথে মেয়েদের পড়তে দিতে হবে। গ্রামবাসীরা মনে করে মেয়েরা একদিন চলে যাবে তাদের শিক্ষা দিয়ে কি হবে? মাহির এ প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ছবির প্রথম অংশে মনে হবে সম্ভবত মাহির এ গল্পের প্রধান চরিত্র। ছবির দ্বিতীয় অংশে গল্প ভিন্ন রুপ নেয়।
গ্রামের বিয়ের প্রথা অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং। গ্রামের বয়স্ক মহিলারা্ গ্রাম প্রধান যাকে উপযুক্ত মনে করে তার জন্য অন্য গ্রামে মেয়ে দেখতে যায়। তাদেরকে কোরআন ,রান্না সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তাদের মুখে গন্ধ আছে কিনা দেখা হয় এবং শেষে একটা সরু সোজা রশ্মির উপর দিয়ে হাঁটতে বলা হয়। যদি তারা উপরোক্ত বিষয়গুলোতে সফল হয় তাহলেই তারা মেয়েকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত বলে। বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে দেখা করতে পারে না। বিয়ের আগে ছেলেরা তাদের মায়ের কাছে কি রকম মেয়ে তাদের পছন্দ তা বর্ণনা করে। কিন্তু প্রত্যেকবারই তারা যা বলে তার বিপরীত মেয়ে মায়েরা পছন্দ করে নিয়ে আসে(মুভি দেখলে বিষয়টি আরো মজার মনে হবে)।
গ্রামের বয়স্কদের মধ্যে প্রতিবন্ধী আজিজ একমাত্র যে স্কুলে যাবার আগ্রহ দেখায়। আজিজ গ্রাম প্রধান দাভুত এলচির ছেলে কিন্তু সে ঠিক মত কথা বলতে, হাঁটতে পারে না। ঘটনাচক্রে আজিজের বিয়ে হয় মিযগিন নামের এক মেয়ের সাথে। আজিজ যখন মিযগিনকে প্রথমবার দেখে সে সেন্সলেস হয়ে যায়(সত্যি বলতে আমি নিজেও দেখে হা হয়ে যাই। এত সুন্দর কেউ হতে পারে জানা ছিল না)। আজিজ প্রতিবন্ধি এবং মিযগিন এত সুন্দরী বলে তাদের নামে নানা রকম কুৎসা রটনা হতে থাকে। অপবাদ সহ্য না করতে পেরে আজিজ তার পরিবারকে চিঠি দিয়ে একরাতে মিজগিনকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। চিঠিতে সে তাদের জানায় যে একদিন সে আবার ফিরে আসবে।
সে ফিরে আসে তবে সাত বছর পর। ফিরে আসার দৃশ্য অসম্ভব সুন্দর। দেখলে কেঁদে দেবার মত।
ছবিটি মাহির বা আজিজকে নিয়ে নয়। ছবিটি গ্রামের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি, রীতি, পরিবারকে নিয়ে। আজিজ একজন প্রতিবন্ধী হবার পরেও তার ভাইদের সাথে তার যে ভাতৃত্বের বন্ধন (যা আমরা স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও নিজ ভাইদের মধ্যে নেই), পরিবারের সবাইকে নিয়ে সময় পার করা, একত্রিত ভাবে থাকা, খাবার খাওয়া(যা আমরা করছি বলে মনে হয় না)এ দৃশ্যগুলো দেখার মত। কিছু শিখার মত।
ছবিটির বেস্ট ডায়লগ ”I fell in love with my wife” দেখার পর মনে হবে আমিও বিয়ে করব ,আমিও বলব I fell in love with my wife. ছবিটি দেখার অনুরোধ রইল। ছবিটি থেকে অনেক কিছু দেখার এবং শেখার আছে।