নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি: দ্যা অর্ডিনারি পারফেকশনিস্ট

আপনি যদি বলিউডের সাইকো- থ্রিলার মুভি ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই গ্যাংস অব ওয়াসেপুর, গ্যাংস অব ওয়াসেপুর-২, কাহানি, রামান রাঘব, মনসুন শুটআউট, বাবুমশাই বন্ধুকবাজ এসব মুভির নাম শুনে থাকবেন।

সেইসাথে শিভা, রামান এই চরিত্রগুলোকে আপনি পর্দায় অবশ্যই বারবার দেখতে চাইবেন। চরিত্রগুলো যেন আপনার কাছে মনে হবে কত বাস্তব! কী সাবলীল অভিনয়! কিছু সময়ের জন্যে হলেও আপনি সেই চরিত্রের মধ্যে মিশে যেতে চাইবেন। কিন্তু এই চরিত্রগুলো যে ব্যক্তি সিনেমার পর্দায় তুলে ধরেছেন, তিনি হলেন বলিউডের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। বলিউডের প্রথম সারির ভার্সেটাইল অভিনেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম হিসেবে বিবেচিত।

নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি

নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির জন্ম ১৯৭৪ সালের ১৯শে মে, ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফর নগর জেলায়। সাধারন একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন তিনি। ৮ ভাই- বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তার বাবা ছিলেন একজন কৃষক।গুরুকুল কাংগারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রসায়নে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তাদের এলাকার সর্বপ্রথম গ্র্যাজুয়েট তিনি। এরপর তিনি ক্যামিস্ট হিসেবে একটি কারখানায় বেশ কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থা থেকেই তার অভিনয়ের প্রতি ঝোক তৈরি হতে থাকে। সপ্তাহ শেষে প্রায়ই থিয়েটারে মঞ্চ নাটক দেখতেন।

যুবক বয়সে

বেশ কিছুদিন চাকরি করার পরেও চাকরিতে তার মন টিকলো না। চলে গেলেন দিল্লিতে। সেখানে ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে’ তিনি অভিনয়ের উপর কোর্স করলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ছোট পর্দায় কাজ করতে মুম্বাইয়ে চলে গেলেন। কিন্তু সেখানে তিনি তেমন কোনো সাফল্য পাচ্ছিলেন না। তবে ১৯৯৯ সালে আমির খানের সারফোরাজ সিনেমায় ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ে সুযোগ পান। কিন্তু এবার তিনি তার অভিনয় দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হন। এরপর দীর্ঘ ১২ বছর তাকে বলিউডে বেশ সংগ্রাম করতে হয়। এমনি তাকে বাসার দারোয়ানের কাজ পর্যন্ত করতে হয়েছে। কিন্তু অভিনয় নেশা তার পিছু ছাড়েনি, নাইট ডিউটি না থাকলে ঠিকই ছুটে যেতেন মঞ্চে। এরপরেও মুন্না ভাই এমবিবিএস, জাংগাল এর মত সিনেমায় ছোট চরিত্রে অভিনয় করলেও সেখানে তিনি তাঁর প্রতিভার ছাপ ফেলতে ব্যর্থ হন।

তবে ২০১১ সালে অনুরাগ ক্যাশপ পরিচালত ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর -২’ সিনেমাটি তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই সিনেমাটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সমালোচিত অভিনেতার পুরষ্কার পেয়েছেন। এছাড়া ২০১৪ সালে ‘কিক’ সিনেমায় অসাধারন অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা খলনায়ক পুরষ্কার অর্জন করেন এবং ২০১৭ সালে ভারতীয় সিনেমা পুরষ্কারে ‘মম’ সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য (Best supporting role actor) হিসেবে মনোনয়ন পান।

মূলত বলিউডে সাইকো থ্রিলার জনরার মুভিতে তিনি একটি বিশেষ স্থান তৈরি করে নিয়েছেন। রামান-রাঘব, বাবুমশাই বন্ধুকবাজ, মনসুন শুটআউট এর মত সিনেমার অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন। এছাড়াও তালাশ, বাজরাংগি ভাইজান, কিক, মম, হারামখোরের মত ব্যাবসায়িক সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে নিজের অভিনয় দক্ষতা প্রকাশ করেছেন। গেলো বছর তিনি ‘An Ordinary Life Of Nawazuddin Siddique’ নামক একটি আত্মজীবনীমূলক বই প্রকাশ করেছেন।

স্ত্রীর সাথে

কঠোর সাধনা এবং পরিশ্রমের ফলেই তিনি আজ একজন বড় অভিনেতা হয়েছেন বলে তিনি মনে করেন। নাওয়াজ এর মতে- তার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরনা তার মা। তার মা-ই তাকে জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে লড়তে শিখিয়েছেন। এত বড়ো অভিনেতা হবার পরেও নাওয়াজ অতি সাধারন জীবন-যাপনেই অভ্যস্ত।জীবনের শেষ পর্যন্ত অভিনয় করে যেতে চান তিনি।তার চলচ্চিত্র জীবনে তিনি আরো কিছু কালজয়ী সিনেমা উপহার দিবেন আশা করাই যায়।

Post Author: Saad Dhrubo

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *