জীবন মানেই বেচে থাকা।
কিন্তু এর প্রকৃত সংজ্ঞা কি? এ প্রশ্নটা অনেকেরই।
তাদের জন্য উপযুক্ত জবাব হতে পারে আব্বাস কিয়ারস্তামির “Taste of Cherry” ছবিটি। এবং সেই সাথে তাদের জন্যেও, যারা আব্বাস কিয়ারস্তামির জীবন ও কর্মকে কেবল “Close Up” কিংবা “The Wind Will Carry Us” এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান।
আর, যারা প্রচলিত ঘরানার বাংলা “বাচাও !!!!” বা “চৌধুরী সাহেব, সীমার একটা ফাইজলামি আছে !!!!!” টাইপের ছায়াছবি দেখতে অভ্যস্ত, তাদের কথা আর নাই বা বললাম!
অন্যান্য ট্র্যাডিশনাল ইরানিয়ান ফিল্মের মত, এ ছবিটিতেও সংলাপ আর চরিত্রকে কাহিনির চেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইরানিয়ান ফিল্ম বরাবরের মতো একটু টুইস্টেড ন্যারেটিভ স্টাইল অনুসরন করে থাকে। তাই যে জিনিসটি মুভিটিতে স্পাইস এনেছে, তা হলো উপস্থাপনা ভঙ্গি আর এর ওপেন-মাইন্ডেড এন্ডিং। মানে, দর্শক মুভি দেখতে থাকবেন, কিন্তু আগে থেকে আন্দাজ করতে পারবেন না, কি হতে চলেছে।
আপনি যদি প্রথম থেকে মুভিটা দেখেন, মনে হবে একজন মাঝবয়সী সমকামী লোক টাকার বিনিময়ে সঙ্গী খুঁজছে, অথবা কোনো সাইকো কিলার মনে হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়।
এই মাঝবয়সী লোকটিই আমাদের মুভির মুল চরিত্র “বাআদি”। সে তেহরানের আশেপাশে গাড়ি চালিয়ে যে কোন একজন মানুষকে খুঁজছে যে বাআদির একটি কাজ করে দিতে পারবে। বিনিময়ে বাআদি তাকে অনেক অর্থ দেবে। (আচ্ছা, ইরানি মুভিতে কোনো কিছু ঘটলেই নায়ক/নায়িকাকে গাড়ি নিয়ে বের হতে দেখা যায়, এর কারন কি?)
কি সেই কাজ?
বাআদি ভাই রাত্রিবেলা অনেকগুলা ঘুমের ওষুধ খেয়ে কবরস্থানে গিয়ে নিজের খোঁড়া একটা কবরে শুয়ে পড়বেন। (সুইসাইড করবেন তো, তাই !)
কেনো বাআদি আত্মহত্যা করবেন, তা আমাদের অজানা। (আমি কিছু জানি না, পরিচালকরে জিজ্ঞেস করুন!)
আর, ঐ লোকটির কাজ হল, বাআদির ঐ কবর মাটিচাপা দিয়ে টাকাভর্তি গাড়ি নিয়ে ভেগে যাওয়া!
কাজটা অনেক সিম্পল মনে হচ্ছে, তাইনা? কিন্তু, এই ভেরি সিম্পল কাজটা করতে পারবে এমন কাউকেই খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
অতিকষ্টে তিনজনকে পান তিনি, যার মধ্যে প্রথম দুজন কাজটা করতে রাজি হয়না। তৃতীয়জন হয়।
হ্যাঁ, এ গল্প শুধু বাআদির নয়। এ গল্প এই তৃতীয়জনেরও।
একজন অধ্যাপক বাঘেরির। যার নিজের সন্তানের চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকা দরকার। তাই সে রাজি হয়েছে বাআদির প্রস্তাবে।
তো, বাআদির গাড়িতে বসে এই বাঘেরি সাহেব কথায় ছলে নিজে যে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো, সেই কাহিনি বলে। হাসতে হাসতে সে জানায়, একবার চেরিগাছে ফাস লাগিয়ে মরতে গিয়েছিল সে। কিন্তু সেই চেরিগাছের ফল এতটাই মিষ্টি আর মধুর ছিল যে, বাঘেরি সারারাত গাছের ডালে বসে চেরি ফল খেতে থাকে, আর সকালবেলা আত্মহত্যা না করেই নিচে নেমে আসে।
বাঘেরির মতে জীবন হল সেই না-খাওয়া চেরি ফলটির মতো, যার স্বাদ আস্বাদন না করে পিছু হটবার মতো বোকামির কাজ আর হয় না।
সে বাআদিকে পরামর্শ দেয়,
If you look at the four seasons, each season brings fruit.
In summer, there’s fruit, in autumn too. winter brings fruit and spring too.
No mother can fill her fridge with such a variety of fruit for her children.
No mom can do as much for her children as God does.
You want to refuse all that? You want to give it all up?
You want to give up the taste of the cherries?
Don’t. I’m your friend,
I’m begging you!
বাঅাদি কি বাঘেরির পরামর্শ গ্রহন করেছিলো………?
নাকি বাঘেরি কাজ করছিলো বাদির কথামত…….?
ছবিটিতেও পরিষ্কার ভাবে দেখানো হয়নি, শেষমেশ বাআদি তার কাজে সফল হতে পেরেছিল কিনা। ওপেন মাইন্ডেড এন্ডিংয়ের এই এক সুবিধা যে, “Everyone has his cards to play in here.” মানে আপনি নিজের মর্জিমাফিক ইন্টারপ্রেটেশন তৈরি করে নিতে পারবেন।
আপনি যদি আত্মহত্যাকে যৌক্তিক বলে মনে করেন তবে আপনার কাছে মনে বাআদিই সফল হয়েছিলো। অন্যদিকে আপনি যদি এর বিপক্ষে হন তবে আপনার মনে হবে বাঘেরিই জয়ী হয়েছে। এককথায় একটা ‘win win situation’. তাই শেষে কী ঘটে তা অার বলছি না, মুভি দেখলেই বুঝবেন! তবে এটুকু বলতে পারি, পয়সা উসুল হবার মত সিনেমা একটা।
শেষে বলতে চাই, যারা জীবনের অর্থ খুজতে চান, দেখতে পারেন মুভিটি। ভাল না লাগলে মানিব্যাক গ্যারান্টি! (আমি দিবো না, প্রডিউসার সাহেব দিলেও দিতে পারে!)
বিশেষ করে, যাদের সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি আছে, তাদের জন্য অব্যর্থ টনিক হতে পারে এই মুভি। (দিনে একবেলা করে, জীবনে অন্তত একবার!)
আর এই টনিকে কাজ না হলে, আমার আর কি করার ! এই মুভিটি দেখবার পরও যদি আপনার আত্মহত্যা করার ইচ্ছা না যায়, তাহলে রাস্তায় গাড়ী নেমে যান, কাউকে না কাউকে অবশ্যই পাবেন আপনার লাশটা দাফন করার জন্য।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরনঃ রিভিউ পড়ে কারো আত্মহত্যার জন্য রিভিউদাতা দায়ী নহে।