২৪ মে ২০১৪,
পর্তুগালের লিসবনে চলছে স্পেনের মাদ্রিদ ডার্বি। প্লাটফর্মটা ভিন্ন, চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনাল; তাই উত্তেজনাটা একটু বেশিই। আনচেলত্তির আক্রমণ ভাগ বনাম সিমিওনের রক্ষণ ভাগ। ফুল টাইমের খেলা শেষে ইনজুরি টাইমের খেলা এগিয়ে চলছে। অ্যাটলেটিকো এগিয়ে আছে ১-০ ব্যবধানে।
অ্যাটলেটিকো সমর্থকদের মনে আনন্দের ঝর্ণাধারা বয়ে চলছে। আর অন্যদিকে রিয়াল সমর্থকেরা অশ্রুশিক্ত চোখ নিয়ে কাথার নিচে মুখ লুকিয়েছে; তাদের ‘লা ডেসিমা’ জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে।
কিন্তু যারা রিয়ালের কট্টর সমর্থক তাঁরা কিন্তু এখনও আশায় বুক বেঁধে আছে; হয়ত রোনালদো-বেল-বেনজিমা (বিবিসি) খ্যাত এই রিয়াল তারকারা তাদের সেই আশার নৌকায় ভর করে এনে দেবেন “লা ডেসিমা”।
৯২ মিনিটে রিয়াল কর্ণার পেল; এই শেষ আশা। পারবে কি রোনালদো, বেল, বেনজিমা গোল করতে? লুকা মদ্রিচের কর্ণার কিক একে একে রোনালদো, বেল, মোরাতাদের পাশ কেটে চলে গেল। কিন্তু গোলের জন্য কামান দাগা রামাসকে ফাঁকি যেন দিতে পারলো না। শূণ্যে ভাসা বলটাকে মাথাটা বাঁ দিকে ঘুরিয়ে প্লেসিং হেডে গোল করে বসল রিয়ালের ত্রাতা সার্জিও রামোস। আর হয়তো এজন্যেই তার হাতের আঙুলে ডিজাইন করা চারটি সংখ্যার মধ্যে শোভা পায় “৯০+” সংখ্যাটি। আর আজ লিখব সেই সার্জিও রামোসের কথা ।
রিয়াল সমর্থকের কাছে খ্যাত “মি.৯২:৪৮” সার্জিও রামোস গার্সিয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৬ সালের ৩০ মার্চ স্পেনের কালমাস শহরে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি তার প্রবল ঝোঁক ছিল। ফুটবলে হাতেখড়ি হয় সেভিয়ার ইয়ুথ একাডেমিতে।
ক্লাব জীবনের সূচনা হয় ২০০৩ সালে সেভিয়া এফসি দলের একজন রাইট ব্যাক হিসাবে নাম লেখানোর মধ্য দিয়ে। ক্যারিয়ারের শুরুর বছরেই বাজিমাত করেছেন, জিতে নিয়েছেন বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের খেতাব। একই সাথে নজর কেড়েছেন বহু ক্লাবের। যাদের মধ্যে অন্যতম রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনা পেরেজ। যার জন্যই হয়তো ২০০৫ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে তখনকার রের্কড ২৭ মিলিয়ন ইউরোতে তিনি পাড়ি জমালেন রিয়াল মাদ্রিদে।
রিয়াল মাদ্রিদে তখন তারকার যেন শেষ নেই। স্কোয়াডে আছেন জিনেদিন জিদান, রোনালদো, ফিগো, বেকহাম, রাউলের মত বাঘাবাঘা খেলোয়াড়। এসব বড় বড় খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকলেও রামোসের আত্মবিশ্বাসের কোনো কমতি ছিল না। যার জন্যেই কোচের আস্থাভাজন হতে তার বেশি সময় লাগে নি; যেন পাকাপোক্ত করে নিয়েছিলেন নিজের পছন্দের রাইটব্যাক পজিশনটি। তারপর আজ অবধি পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি। ইকার ক্যাসিয়াস মাদ্রিদ ত্যাগ করার পরে অধিনায়কের আর্মব্যান্ডটা যেন তার বাহুতেই বেশি শোভা পায়।
প্রতিপক্ষকে অযথা, অপ্রয়োজনীয় ফাউল করা নিয়ে তিনি বেশ সমাদৃত ও সমালোচিত। মাঠে কোনো সতীর্থ প্রতিপক্ষ দলের কারো দ্বারা ফাউলের শিকার হলে সবার আগে ছুটে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় তর্ক করা শুরু করেন। হঠাৎ রেগে যাওয়া, মেজাজ হারানো যেন তার বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে; যার ফলে গুনতে হয় অযথা হলুদ বা লাল কার্ড। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে গুনতে হয়েছে ২৪ টি লাল কার্ড যার প্রথম পাঁচটি এসেছে রিয়ালের হয়ে খেলা প্রথম সিজনে। বর্তমানে তার জাতীয় দলের সতীর্থ জেরার্ড পিকের সাথে বাক্য বিনিময় মিডিয়ায় বেশ আলোড়ন তুলেছে।
এই ভালো-খারাপের মাঝেও সার্জিও রামোস ক্লাবের হয়ে জিতেছেন ৪ টি লা-লিগা এবং ৩ টি চ্যাম্পিয়নস লীগ কাপ। জাতীয় দলের হয়ে জিতে নিয়েছেন ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ, ২০০৮ ও ২০১২ ইউরো কাপ। এছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে জিতেছেন FIFA Pro ৮ বার, UEFA team of the year এর সদস্য হয়েছেন ৭ বার। এছাড়াও অসংখ্য ব্যক্তি পর্যায় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
একজন সার্জিও রামোস ব্যক্তি, ক্লাব, জাতীয় প্রতিটি স্থানে এভাবেই তার প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন এবং চলবেন।