মেটাল মিউজিক ও কিছু কথা

মেটাল শব্দটি শুনলেই অনেকের চোখে ভেসে উঠে এলোমেলো চুলে, উত্তেজিত ভঙ্গিমায়, উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকা একজন গায়কের ছবি। আর তার সাথে প্রবল বেগে মাথা ঝাঁকাতে থাকা ও প্রবল গতিতে বাদ্য বাজাতে থাকা কয়েকজন সঙ্গী। এই মেটাল গায়ক ও তাদের শ্রোতাদের অনেক দুর্নাম আছে। তারা নাকি ভীষণ মেজাজী, অল্পতেই রেগে গিয়ে চড়াও হন অন্যদের উপর। আবার অনেকে ভাবেন, তারা নাকি সবাই জীবন নিয়ে পুরোপুরি হতাশ। নিজ হতাশাকে ঢাকার জন্য তারা এমন উদ্ভট ধরনের গান শুনে থাকে। আবার অনেকে তো মেটালকে সঙ্গীত বলে স্বীকার করতেই নারাজ।

কিন্তু তাদের এসব ধারণাগুলোর বেশিরভাগই ভুল।আজ মেটাল মিউজিক কি এবং আসল মেটাল শ্রোতারা (যারা নিজেদেরকে মেটালহেড বলতে পচ্ছন্দ করে) কেমন সে সম্পর্কে কিছু ধারণা আমি আপনাদের দিতে চাই।

প্রথমেই বলে নিই, মেটাল সঙ্গীতের একটি প্রতিষ্ঠিত জনরা। পুরো বিশ্বেই মেটাল গানের চর্চা করা হয়।মেটালের রয়েছে অসংখ্য সাব-জনরা। এসব সাব-জনরার উপর ভিত্তি করে মেটাল গানের ধরনের অনেক ভিন্নতা দেখা যায়। ফিসফিস বা গর্জন, রুক্ষ বা সংবেদনশীল, সুরেলা বা তীক্ষ্ণ, মেটাল গানে আপনি সবধরনের সুরই শুনতে পাবেন। মেটাল কোনো ছোট শাখা না। সত্যি বলতে মেটালের সবটা জানা খুবই মুশকিল। কারণ এর প্রতিটি শাখারই রয়েছে অসংখ্য উপশাখা। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি মেটালের একটি শাখা, পাওয়ার অথবা ডেথ মেটাল এর কথা বলি, তার সাথে মেলোডি কথাটি যোগ করলে সেটি হয়ে যাবে মেলোডিক ডেথ/পাওয়ার মেটাল, যা পাওয়ার/ডেথ মেটাল থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। অনেক ব্যান্ড আছে যারা শুধু একটি মাত্র জনরার গান করে। আবার অনেক ব্যান্ড এরকম একাধিক জনরার গান একত্রে গেয়ে নিজেদের আলাদা একেকটি ফিউশন তৈরি করে। মেটালের এসব জনরা নিয়ে আমরা পরে আরো বিস্তারিত কথা বলব।

এবার একটু কথা বলি মেটাল মিউজিক ফ্যানদের নিয়ে। খুব সম্ভবত মেটাল গানের একমাত্র শাখা যাদের ভক্তদের মধ্যে এতোটা গাঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠে।মেটাল তাদের কাছে শুধু সময় কাটানোর কোনো পন্থা না। এটি তাদের লাইফস্টাইল। মেটাল এমন এক কমিউনিটি, যার সদস্য রয়েছে পুরো বিশ্বজুড়ে। এই কমিউনিটিতে কেউ কাউকে ছোট করে না। সব বয়স, শ্রেণী ও জাতির মানুষের রয়েছে এখানে প্রবেশাধিকার।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যেসব মানুষ তার আশেপাশের সমাজের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না বা যাদের জীবনে খুব বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে তারাই মেটালের দিকে আকৃষ্ট হয়। মেটাল গানের কারণে তারা তাদের জীবনের কষ্টকে কিছুক্ষণের জন্য ভুলে থাকতে পারে। তার মানে এই নয় যে মেটাল গান শোনার জন্য জীবনে কোনো ট্র্যাজেডি থাকা আবশ্যক। অনেকেই আছেন যারা শুধুমাত্র মেটালের ভিন্ন ধরনের গান ও মেটালের বৈচিত্রের কারণে তার ভক্ত হয়ে যায়। কিন্তু যে কারণেই আপনি এই মেটাল জগতে প্রবেশ করুন না কেন, একবার এখানে প্রবেশ করলে বের হওয়া খুব কঠিন। মেটাল ভক্তদের মধ্যে গড়ে ওঠে এক আত্মিক সম্পর্ক, যা তাদেরকে একে অপরের সাথে সবসময় জুড়ে রাখে।

আপনার মেটাল গান ভালো না লাগতেই পারে, কিন্তু তার মানে এই না যে এই গান অন্যদের ভালো লাগবে না। অন্যের রুচির সাথে একমত না হলেও, একজন সমঝদার সঙ্গীতরসিক হিসেবে সেটিকে আপনার অবশ্যই সম্মান করা উচিত।

Post Author: RK Desk

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *