পাখি কাহিনী

 

এক ছিল তোতাপাখি।

সে গান গাহিতো, নাচও করিতো, অাবার ক্লাস লেকচারের সময় মোটা ফ্রেমের চশমায় চক্ষু অাড়াল করিয়া সুখনিদ্রায়ও যাইতো।

যাহার ফলে প্রতি সিমেস্টারান্তে তাহার নাম রেজাল্টের তালিকার নিচের দিক দিয়া প্রথমেই অবস্থান করিতো।

রাজা বলিলেন, “এমন পাখি কোনো শ্রীবৃদ্ধি করে না, অথচ লো সিজিপিএ পাইয়া ভার্সিটির বদনাম ছড়ায়।”

অাদেশ অাসিলো, “পাখিটিকে শিক্ষা দেয়া হউক।”

অনেক সার্ভে, রিসার্চ ও রিস্ক্রুটিনি চলিলো। স্টাডির থিসিস হইলো, “পাখির অজ্ঞতার প্রেক্ষাপট ও কারণ”।

অবশেষে একদিন রিসার্চের ফলাফল পাবলিশ হইলো। জানা গেল, একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের অভাবে তাহার রেজাল্টের এহেন অবনমন।

সিদ্ধান্ত হইলো, এই বিশ্বায়নের যুগে ফেসবুক ব্যাতিরেকে শিক্ষিত হইয়া উঠা সম্ভব নয়। তাই সকলের অাগে দরকার একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট।
রিসার্চের সফল পরিসমাপ্তি ঘটিলো।

রাজার ভাগিনারা বসিলো একাউন্ট বানাইতে। একাউন্টটা এমন যে, দেশ বিদেশ হইতে হু-হু করিয়া ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট অাসিতে লাগিলো।

কেহ বলিতে লাগিলো, “বাহ্ এই বুঝি শিক্ষা!” অাবার কেহ বলিলো, “অারে, শিক্ষা না হউক, একাউন্ট তো হইলো। ফিলিং জেলাস ফর পাখি!”

ফটোগ্রাফার অাসিলেন ডিপি তুলিবার জন্য। মডেল দেখিয়া বলিলেন, “অল্প অাটা ময়দার কাজ নয় ইহা!”

ভাগিনারা তখন মেকঅাপ অার্টিস্ট অার গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের তলব করিলেন। তারা মেকঅাপের ওপর মেকঅাপ, ফটোশপের ওপর ফটোশপ করিয়া পর্বতসম করিয়া তুলিলো। যেই দেখে, সেই বলে, “বাহ্, রূপ যে অার ধরে না!”।

একাউন্টখানার পিছে ভাগিনাদের নজরদারীর যেন শেষ নাই। নজরদারী ঠিকভাবে চলিতেছে কিনা, তাহার ওপরও নজরদারী বসানো হইলো। বিশেষ করিয়া ঘনঘন মাইডের পরিবর্তন দেখিয়া সকলেই বুঝিলো, উন্নতি হইতেছে।

এই জগতে অনেক কিছুরই অভাব থাকিতে পারে, কেবল নিন্দুকের সংখ্যাই যথেষ্ট। তাহারা বলিলো, ” কেবল একাউন্টেরই উন্নতি হইতেছে, পাখির নহে।”

কথাটা রাজার কানে পৌছাইতে দেরি হইলো না। ভাগিনার তলব পড়িলো।

ভাগিনা বলিলো, “মহারাজ, সত্য শুনিতে চাইলে ডাকুন অাটা-ময়দার ব্যবসায়ীদের, ডাকুন মেকঅাপ অার্টিস্টদের, ডাকুন মডারেটর অার ফটোগ্রাফারদের। নিন্দুকদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট হয় না দেখিয়াই হলুদ সাংবাদিকদিগের মতোন প্রোপাগান্ডা ছড়াইয়া বেড়াইতেছে।”

ভাগিনার ইন্টারপ্রেটেশন শুনিয়া রাজা সামগ্রিক অবস্থাটা পরিস্কার বুঝিলেন এবং একাউন্ট ভেরিভায়েড স্ট্যাটাস লাভ করিলো।

শিক্ষা যে কী থ্রিজি স্পিডে চলিতেছে, তা রাজার ইচ্ছা হইলো স্বয়ং দেখিবেন। তাই সিদ্ধান্ত হইলো, একদিন পাখির অ্যাকাউন্টটি সচক্ষে দেখিবার।
প্রোফাইলে ঢোকামাত্রই বিবিধ পোস্ট-স্ট্যাটাসের ছড়াছড়িতে নিউজফিড ভরিয়া উঠিলো।

ভাগিনা বলিলো, “মহারাজ ডিপিটা কি দেখিয়াছেন?
মহারাজ বলিলেন, “বটে। কভার পিকও কম নহে।”

হালহাকিকত দেখিয়া রাজা লগঅাউট করিবেন, এমন সময় ইগকোগনিটো মোডে থাকা নিন্দুক বলিয়া উঠিলো, “মহারাজ, পাখির মাইডেটা দেখিয়াছেন কি?”

রাজা বলিলেন, “এই যা, মনেই ছিলো না!”

পুনরায় লগইন করিয়া রাজা পাখির মাইডে পর্যবেক্ষণ করিলেন। পাখি কোনো এক ইভেন্টে গোয়িং থাকায়, চ্যাট করিবার ফুসরত নাই। রাজা বুঝিতে পারিলেন, শিক্ষার কোনো ত্রুটি রাখা হয় নাই।

লগঅাউট করিবার সময় রাজা বলিয়া দিলেন, নিন্দুককে যেনো অাচ্ছা করিয়া ব্লক মারিয়া দেয়া হয়।

নানাবিধ চাপের মুখে পড়িয়া পাখির অবস্থা দিন দিন অাশঙ্কাজনক হইয়া উঠিলো। যদিও অভিভাবকদের ভাষায় পরিস্থিতি বেশ “অাশাজনক”। তবে এখনও সে স্বভাবদোষে গলায় ভাঙ্গা সুর তুলিবার চেষ্টা করিয়া বেড়ায়। এমন-কি একদিন দেখা গেলো, সে তাহার অাইডির পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করিবার চেষ্টা করিতেছে।

মডারেটর বলিলো, “এ কেমন বেয়াদবি!”

তৎক্ষণাৎ অাইডিতে দু-চারটি ফিল্টার তো বসিলোই, সাথে অানলিমিটেড “অ্যাড মি” অপশনও বন্ধ হইলো।

সকল মিউচুয়াল ফ্রেন্ডরা মুখ কালো করিয়া বলিলো, “ছি-ছি! কলিকাল যে চারপোয়া হইয়া অাসিলো!”

এদিকে ভাগিনারা এক হাতে কীবোর্ড, অারেক হাতে মাউস লইয়া এমন এক কান্ড করিলো, যাহাকে বলে এডুকেশন!!!

পাখির ফ্যান-ফলোয়ার কমিয়া অাসিলো এবং মডারেটরের কর্মতৎপরতা দেখিয়া রাজা তাহাকে অ্যাডমিন বানাইয়া দিলেন।

পাখিটি একাউন্ট ডি-অ্যাক্টিভেট করিলো।

তবে তাহা সিমেস্টার ফাইনালের অাগে না পরে, তাহা কেউ ঠাহর করিতে পারিলো না। নিন্দুক স্ট্যাটাস দিয়া প্রচার করিলো, পাখি তাহার একাউন্ট ডি-অ্যাক্টিভেট করিয়াছে।

মহারাজ বলিলেন, “ভাগিনা, এ কেমন বিচার?”
ভাগিনা উত্তর দিলো, “মহারাজ, পাখির গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হইয়াছে।”

রাজা শুধাইলেন, “ও কি অার প্রোপিক অাপলোড দেয়?”

– না।

“পোস্ট-স্ট্যাটাস দেয়?”
– না।

“মাইডে কিংবা মেমোরি শেয়ার?”
– না।

“ইভেন্টে গোয়িং?”
– OMG!

মহারাজ বলিলেন, “ল্যাপটপটা একটু অানো তো দেখি।”

ল্যাপটপ অানা হইলো। মহারাজ কতোক্ষণ কীবোর্ড টিপাটিপি করিলেন। পাখির অ্যাকাউন্টের কোনো হদিস নাই। শুধু লেখা উঠে, “This person has either blocked you, or terminated his/her account”

এমন সময় বাহিরে কোথাও শোনা গেলো, “The winter has come, the winter has come.”

(বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত তোতা-কাহিনীর স্যাটায়ার)

Post Author: Usamah Ibn Mizan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *