বল টেম্পারিং : কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

১৯৮৪ সন।

ইংল্যান্ড এর লর্ডস এর মাঠ।

খেলা চলছে ইংল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকার মধ্যে। হঠাৎ করেই টেলিভিশন ক্যামেরায় দেখা গেল, ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল অাথারটন বল নিয়ে তার বালু ভর্তি পকেটের মধ্যে ঘষছেন। ম্যাচ শেষে অাথারটন বলেন যে হাত শুকনো রাখার জন্য পকেটে বালু রেখেছিলেন তিনি, যা পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং অাথারটনকে তৎকালীন ২০০০ ইউরো জরিমানা করা হয়। এর মাধ্যমেই ক্রিকেটবিশ্ব প্রথম বল টেম্পারিং এর নমুনা দেখতে পায়।
বল টেম্পারিং বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের এক বহুল আলোচিত বিষয়। ক্রিকেট খেলায় অনেক অনিয়ম দেখা যায় যার মধ্যে আছে ম্যাচ ফিক্সিং এর মতো বড় অপরাধ থেকে শুরু করে স্লেজিং এর মতো ছোটো খাটো বিষয়ও। পূর্বে এসব ঘটনা চোখের আড়ালে পড়ে থাকলেও বর্তমানের উন্নত মিডিয়ার জন্য এই কাজগুলো এখন শুধু মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকছে না।

কী এই বল টেম্পারিং?
নির্দিষ্ট কিছু উপায় ছাড়া বলের আকৃতি পরিবর্তন করাই এক কথায় বল টেম্পারিং। ক্রিকেট খেলায় বলের আকৃতি পরিবর্তনের জন্য ক্রিকেটাররা জার্সির হাতা বা ট্রাউজার এর সাথে ঘষে, থুথু অথবা লালা ব্যবহার করে বলের এক পাশ মসৃণ করে। আইসিসি এর নিয়ম অনুসারে এইগুলো বৈধ। কিন্তু অন্য কোনো উপায় যেমন শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষা , নখ দিয়ে খুটা, জিপারের সাথে ঘষা ইত্যাদি উপায় ব্যবহার করে বলের আকৃতি পরিবর্তন করাকেই বলে বল টেম্পারিং।

বল টেম্পারিং এর বিভিন্ন উপায়

কেন করা হয় বল টেম্পারিং?
পেস বোলাররা সাধারণত বলে সুইং দিয়ে থাকে। বাতাসে বল বেকে যাওয়া কে বলে রিভার্স সুইং। ক্রিকেট বল যেহেতু কাঠের এবং উভয় পাশই সুষম তাই বল বাতাসে কম বাকে। কিন্তু বল এর এক পাশ মসৃণ ও এক পাশ রুক্ষ করলে বলের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে বল বাতাসে বেকে যায়। রিভার্স সুইং ব্যবহার করে বোলার ও খুব ভালো বল করতে পারে।
তাই বোলারকে বাড়তি সুবিধা দেয়ার জন্যই বল টেম্পারিং করা হয়। এতে বোলার নিজের ইচ্ছামতো সুইং ব্যবহার করতে পারে। সাধারণত যখন ইন সুইং করা হয় তখন বোলার বলের মসৃণ দিক আগে রাখে আর রিভার্স সুইং করার জন্য রুক্ষ দিক সামনে রেখে বল করে।
কীভাবে করা হয় বল টেম্পারিং?
সাধারণত টিম ক্যাপ্টেন কয়েকজনকে নির্দিষ্ট করে রাখেন, যারা বল পেলেই বলকে জার্সির হাতা কিংবা ট্রাওজার এর সাথে ঘষে ঘষে মসৃণ করার চেষ্টা করতে থাকে। মাঝে মাঝে ফিল্ডাররা থুথু কিংবা লালা ব্যবহার করে থাকে বল মসৃণ করার জন্য। এই সকল কাজ আইসিসি এর নিয়ম অনুসারে বৈধ।

কিন্তু অনেক সময় ফিল্ডাররা বাইরের কোন বস্তু যেমন শিরিষ কাগজ বা বালু বা অন্য কিছু ব্যবহার করে থাকে বল এর আকৃতি পরিবর্তন করার কাজে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অনেক সময় নখ দিয়ে খুঁটিয়ে বলের সিম একটু উঁচু করে ফেলা হয় যার ফলে স্পিনারদের জন্য বল টার্ন করানো সহজ হয়। অনেক সময় ফিল্ডাররা ট্রাউজারের জিপারের উপর বল ঘষেও বল অমসৃণ করে থাকে।
বল টেম্পারিং কি বৈধ না অবৈধ?
ক্রিকেট আইনে বলা আছে ক্রিকেট বলকে মুখের লালা ব্যবহার করে পালিশ করা যাবে, তোয়ালে দ্বারা শুকানো যাবে যদি বল ভেজা থাকে এবং আম্পায়ারের পর্যবেক্ষণে বল থেকে কাঁদা অপসারণ করা যাবে। কিন্তু বাকি যেকোন প্রকার কাজই অবৈধ।

বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে সাজাপ্রাপ্ত অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার, অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও ব্যাটসম্যান ক্যামেরুন ব্যানক্রফট।


বল টেম্পারিং এর শাস্তি সমূহ কি কি?
মাঠের আম্পায়াররা খেলার শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকেন। যদি আম্পায়ার মনে করেন যে কোন টিম বল টেম্পারিং এর সাথে জড়িত তাহলে তিনি বিপক্ষ টিম কে পাঁচ রানের পেনাল্টি দিতে পারেন। আম্পায়াররা একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর বল পরীক্ষা করে থাকেন , প্রয়োজনে বল পরিবর্তন করে নতুন বল খেলায় দিতে পারেন।
টেম্পারিং এ অভিযুক্ত বোলার পুরো ম্যাচ জুড়ে বল করার অনুমতি হারাতে পারেন। আর অপরাধ যদি গুরুতর হয়, তাহলে ক্রিকেট বোর্ড থেকে ম্যাচ ফি জরিমানা থেকে শুরু করে টিম থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার পর্যন্ত হতে পারে।

সম্প্রতি বল টেম্পারিং এ অভিযুক্ত হয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ এবং সহকারী অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার বারো মাসের, এবং ক্রিকেটার ক্যামেরন ব্যানক্রফট ছয় মাসের জন্য বহিষ্কৃত হন।
ক্রিকেট এ সুইং একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু অবৈধ উপায় অবলম্বন করলে আছে কঠিন শাস্তি তাই সকলের উচিত বৈধভাবেই বলের আকৃতি পরিবর্তন করে সুইং বাড়ানোর চেষ্টা করা ।

Post Author: Md. Ahsanul Haque Sium

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *