আমির খানের সেরা পাঁচ ছবি

১৯৭৩ সালে ‘ইয়াদো কি বারাত’ ছবিতে আট বছর বয়সে বলিউডের রূপালি জগতে তার অভিষেক। ১৯৮৪ সালে ‘হোলি’ ছবিতে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর প্রথম অভিনয়। চার বছর পর ১৯৮৮-তে ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবিতে অভিনয় করে তারকা খ্যাতি অর্জন। তারপর একে একে তিনি দর্শকদের উপহার দিলেন ‘জো জিতা ওয়াহি সিকান্দার’ (১৯৯২), ‘রঙ্গিলা ‘(১৯৯৫), ‘ইশক’ (১৯৯৭), ‘দিল চাহ্‌তা হ্যাঁয়’ (২০০১), ‘লগান’ (২০০১), ‘তারে জমিন পার; (২০০৭), ‘থ্রি ইডিয়টস’ (২০০৯) ইত্যাদি আরো কালজয়ী সিনেমা। নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন, হিন্দি চলচ্চিত্রের তিন খানের অন্যতম আমির ‘দ্যা পারফেকশনিস্ট’ খানের কথা বলছি। আজকে আইএমডিবি-র মতে এই জীবন্ত কিংবদন্তীর অভিনয়জীবনের সেরা পাঁচটি চলচ্চিত্রের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

১. থ্রি ইডিয়টস (২০০৯)

হিন্দি চলচ্চিত্রের এক মাইলফলক ছবি বলা চলে থ্রি ইডিয়টসকে। দুই বন্ধু ফারহান আর রাজু মিলে তাদের তৃতীয় বন্ধু র‍্যাঞ্চো, যে কিনা কলেজ জীবনের শেষেই তাদের সাথে সব যোগাযোগ ছিন্ন করে লাপাত্তা হয়ে যায়, তাকে খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা এই ছবির মূল গল্প। কাহিনি যত এগোতে থাকে আমরা দেখতে পাই তাদের কলেজ জীবনের পুরোনো নানা স্মৃতি, এই তিনজনের মধ্যে গড়ে ওঠা গাঢ় বন্ধুত্ব, কলেজ জীবনে ঘটে যাওয়া নানা হাস্য রসাত্মক ঘটনা। এই ছবিটি ভারতের শিক্ষার্থীদের কাছে তুমল জনপ্রিয়তা পায়। কারণ, এই ছবিটি ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার অসুস্থ প্রতিযোগিতার সংস্কৃতিকে প্রথমবারের মত সবার সামনে নিয়ে আসতে পারে। কিভাবে শিক্ষার্থীদের তাদের অভিভাবকের চাপে, সমাজের কথায় কান দিয়ে নিজের ইচ্ছার আর সৃজনশীলতার গলা চেপে দিয়ে সমাজের বলে দেয়া পথেই চলতে হয় আর বাইরের এত শত চাপের কারণে শিক্ষার্থীদের ভেতরের জগৎ যেভাবে ওলোট-পালট হতে থাকে তা এই ছবিটিতে কৌতুকের ছলে তুলে ধরা হয়। আমির খান এখানে র‍্যঞ্চোর চরিত্রে অভিনয় করেন।

২. তারে জমিন পার (২০০৭)

আট বছরের এক ছোট ছেলে ইশান। দারুণ আকতে পারে সে। মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায় নিজের কল্পনার জগতে। তার মনের রঙিন জগত থেকে খুঁজে পাওয়া রঙ তুলি দিয়ে ছড়িয়ে দেয় সে ক্যানভাসে। কিন্তু তার বাবা-মা, স্কুলের শিক্ষক, পাড়া প্রতিবেশী সবাই তার উপর বেজার। কেননা সে পড়ালেখায় খুবই কাঁচা, অন্যসব ছেলেদের সাথে সহজে মিশতে পারে না আর প্রচন্ড একরোখা। তার বাবা তাকে উচিৎ শিক্ষা দেয়ার জন্য, আর তাকে আরো কড়া শাসনে রাখার জন্য পাঠিয়ে দেয় বোর্ডিং স্কুলে। এখানে এসে ইশানের অবস্থা হয়ে পরে আরো সঙ্গিন। মা থেকে দূরে থাকা তার জন্য হয়ে ওঠে খুব কঠিন। খুব করে সে চেষ্টা করে পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার, কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে তার আছে অক্ষরগুলোকে নিজের শত্রু মনে হয়। বিষন্নতায় ভোগা শুরু করে ইশান, ছেড়ে দেয় ছবি আঁকা। আর তখনই স্কুলে আসে এক নতুন আর্ট টিচার নিকুম্ভ। ইশানের এই বিষন্নতা তার চোখে পরে। অন্য কেউ যা বুঝতে পারছিল না সে বুঝে ফেলে। আসলে ইশান এক মানসিক ব্যাধি, ডিসলেক্সিয়ায় ভুগছিল। ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির অক্ষর পড়তে ও চিনতে সমস্যা হয় যার কারণে প্রাথমিক ক্ষেত্রের পড়াশোনায় তারা পিছিয়ে থাকে। ছবিটিতে আমির খান অভিনয় করেছিলেন আর্ট টিচার নিকুম্ভের চরিত্রে। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনা ও প্রযোজনাও করেছিলেন তিনি।

৩. পিকে (২০১৪)

ভিনগ্রহী এক এলিয়েন পৃথিবীতে আসার পর চুরি হয়ে যায় তার রিমোট। নিজের গ্রহের সাথে যোগাযোগ করার একমাত্র যন্ত্র এই রিমোটটি ছাড়া সে কোনোভাবেই নিজের গ্রহের অধিবাসীদের ডাকতে পারবে না তাকে নিয়ে যাবার জন্য। তার সেই হারানো রিমোট খুঁজে পাওয়ার কাহিনিই নিয়েই পিকে ছবিটি আবর্তিত। কিন্তু বাইরের খলস কমেডির হলেও আসলে ছবিটি ছিল ভারতের অসংখ্য ধর্মের মানুষদের মধ্যে চলে আসা ধর্মীয় বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা, সমাজের বিভন্ন স্ববিরোধী বিধি-নিষেধ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের হর্তা-কর্তাদের উপর মানুষের অন্ধ বিশ্বাসকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক এক বিশ্লেষণ। এক ভিনগ্রহী প্রাণী সেজে আমির খান আমাদের সমাজের নানা স্ববিরোধিতা তুলে ধরেছেন এই ছবিটিতে।

৪. দঙ্গল (২০১৬)

ভারতের হরিয়ানার এক কুস্তিগির মহাবীর সিং ফোগাত-এর নিজের দুই কন্যা গীতা আর বাবিতাকে কুস্তিগির বানানো ও তাদেরকে দিয়ে ভারতের জন্য কমনওয়েলথ প্রতিযোগিতায় সোনা জয়ের জন্য প্রস্তুত করার গল্প হচ্ছে দঙ্গল। সত্য ঘটনা নিয়ে তৈরি এই ছবিটি ভারতীয় গ্রামীণ সমাজে ছেলেদেরকে ,মেয়েদের চেয়ে শ্রেয় মনে করার প্রবণতা ও সেই ধারণার অসারতাকে তুলে ধরে। এক বাবা তার সন্তানদের নিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা, মেয়েদের সাথে তার সম্পর্ক, তার বাইরের কড়া অবয়বের পিছনে লুকিয়ে থাকা এক স্নেহবান পিতা আর সমাজের নানা বাধাকে তুচ্ছ করে নিজের মেয়েদেরকে নিয়ে তার এগিয়ে যাওয়া, একে ঘিরেই সিনেমাটি এগোতে থাকে। ছবিটিতে মহাবীরের চরিত্রে অভিনয় করেন আমির এবং তিনি ছবিটির অন্যতম প্রযোজক। চরিত্রের প্রয়োজনে নিজের ওজন বাড়িয়ে ৯৭ কেজি করে ফেলেন। ইচ্ছা করলে বডি স্যুট পরে অভিনয় করতে পারতেন কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি আমির। এমনি এমনি তো তাকে মি. পারফেকশনিস্ট বলা হয় না!

৫. রঙ দে বসন্তি (২০০৬)

এক ব্রিটিশ মেয়ের ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীদের নিয়ে এক ডকুমেন্টারি নির্মাণ করার জন্য ভারতে আসেন। সেখানে তার সাক্ষাৎ হয় ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া একদল বন্ধুর সাথে। সারাক্ষণ হাসি, ঠাট্টা, আড্ডায় মেতে থাকা সেই বন্ধুদের পছন্দ হয়ে যায় তার। প্রস্তাব দেয় তাদেরকে তার ডকুমেন্টারিতে অভিনয় করতে। প্রথমে অনাগ্রিহ দেখালেও তারা একপ্রকার অবজ্ঞার ছলেই রাজি হয়ে যায় অভিনয় করতে। নিজের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের নিয়ে শুরুতে অনাগ্রহ দেখালেও ধীরে ধীরে সেই বন্ধুদের অন্দরমহলে পরিবর্তন আসতে থাকে। আর সেই সময়ে ঘটে যায় এমন এক দুর্ঘটনা যা তাদের জীবনের মোড় পাল্টে দেয়। তাদের মাঝেই যেন ফিরে আসে সেই পুরোনো বিপ্লবীদের আত্মা। সমসাময়িক অন্যান্য চলচ্চিত্র থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এই ছবিতে আমির খান একইসঙ্গে দলজিৎ (ডিজে) ও বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদ-এর চরিত্রে অভিনয় করেন।   

Post Author: Ashfaq Niloy

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *