আইনস্টাইন সম্পর্কে ১০টি অজানা তথ্য

বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী, আধুনিক পদার্থবিদ্যার পথপ্রদর্শক এবং বিশ্বের সবথেকে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। বিজ্ঞান সম্পর্কে নুণ্যতম ধারণা না রাখা ব্যক্তিও আইনস্টাইন সম্পর্কে জানে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের পাশাপাশি ব্যক্তি আইনস্টাইনকে নিয়েও মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। চলুন জেনে আসা যাক কালজয়ী এই বিজ্ঞানীকে নিয়ে এমন ১০টি তথ্য যা আমাদের অনেকের কাছেই অজানা।

১.আইনস্টাইন সিন্ড্রোমঃ

বিশ্বজয়ী এই পদার্থ বিজ্ঞানীর শিশু বয়সে কথা বলা শুরু করতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়। আইনস্টাইন প্রথম কথা বলা শুরু করেন বছর বয়সে। তাঁর মত আরো অনেক বিশেষ মেধার অধিকারি ব্যক্তিদের শিশুকালে কথা বলা শুরু করতে সময় লেগেছে। আইনস্টাইনের নাম অনুসারে এই সিন্ড্রোমকে ‘আইনস্টাইন সিন্ড্রোম’ বলা হয়।অর্থনীতিবিদ ড. থমাস সোওয়েল এই নামকরণটি করেন।

২.ভায়োলিনবাদক আইনস্টাইনঃ

আইনস্টাইনের মা পাউলিন একজন পিয়ানবাদক ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর ছেলেও যেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ হয়। তাই ৫ বছর বয়সে আইনস্টাইনকে তাঁর মা ভায়োলিন শেখার ক্লাসে ভর্তি করে দেন। প্রথমদিকে আইনস্টাইনের ভায়োলিন বাজাতে ভালো লাগত না। কিন্তু ১৩ বছর বয়সে মোজার্টের বানানো সুর শোনার পর থেকে তাঁর ভায়োলিনের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। আইনস্টাইন খুবই দক্ষ ভায়োলিন বাদক ছিলেন। যেখানেই আইনস্টাইন ভ্রমণ করতেন সেখানে তাঁর সঙ্গী হিসেবে থাকত ভায়োলিন।

৩.বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ফেলঃ

আইনস্টাইনকে নিয়ে প্রচলিত নানা গুজবের মধ্যে একটি হচ্ছে আইনস্টাইন নাকি স্কুল পরীক্ষায় ফেইল করতেন। কিন্তু গুজবটি মিথ্যা। আইনস্টাইন স্কুলজীবনে মাঝারি ধরনের শিক্ষার্থী ছিলেন কিন্তু গণিতে তিনি বরবরই খুব ভালো ছিলেন। কিন্তু ১৮৯৫ সালে আইনস্টাইন সুইস ফেডেরাল পলিটেকনিক নামের একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। আসলে পরীক্ষায় গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে খুব ভালো নম্বর পেলেও অন্যান্য বিষয়ে ফেইল করায় সামগ্রিকভাবে আইনস্টাইন অকৃতকার্য হয়ে যান।

৪.প্রেসিডেন্ট আইনস্টাইন

১৯৫২ সালের ৯ নভেম্বর ইসরাইলের প্রথম প্রেসিডেন্ট কিয়াম ওয়াইজম্যান মারা গেলে তাঁর জায়গায় আইনস্টাইনকে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু ৭৩ বছর বয়সী আইনস্টাইন প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। প্রত্যাখ্যানের কারন হিসেবে তিনি মানুষের সাথে যোগাযোগ করার অক্ষমতা ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকাকে উল্লেখ করেন।

৫.নোবেল জেতার আগেই তার অর্থমূল্য স্ত্রীকে দেয়ার প্রতিশ্রুতিঃ

আইনস্টাইন কর্মক্ষেত্রে সফল হলেও পারিবারিক জীবনে সফল ছিলেন না। তাঁর প্রথম স্ত্রী মিলেভা মারিচ-এর সাথে তাঁর সম্পর্ক কখনোই মধুর ছিল না। ১৯১৪ সাল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পর ১৯১৯ সালে তিনি তাঁকে ডিভোর্স দেন। ডিভোর্সে তিনি মিলেভাকে নিজের নোবেল পুরস্কারের অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু মজার কথা হচ্ছে তখনো আইনস্টাইন নোবেল পুরষ্কার পাননি। ডিভোর্সের ২ বছর পর ১৯২১ সালে আইনস্টাইন পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান এবং নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে পুরষ্কারের অর্থ মিলেভাকে দিয়ে দেন।

আইনস্টাইন ও তাঁর ১ম স্ত্রী মিলেভা মারিচ

৬.নাবিক আইনস্টাইনঃ

আইনস্টাইনের একটি বড় শখ ছিল নৌকা চালানো। আইনস্টাইন নিজেই স্বীকার করতেন যে তিনি ভালো করে নৌকা চালাতে পারেন না। এমনকি তিনি সাঁতার কাটতেও জানতেন না। তবুও তিনি নৌকা চালানো ছাড়েননি।

৭.মোজার প্রতি বিদ্বেষঃ

আইনস্টাইন তাঁর খেয়ালি পোশাক ও উশকো খুশকো চুলের জন্য সুপরিচিত। তাঁর একটি উদ্ভট অভ্যাস ছিল কখনো মোজা না পড়া। আইনস্টাইনের কাছে মোজা পড়াকে বাড়তি ঝামেলা বলে মনে হত। তাই তিনি সবসময় মোজা ছাড়াই জুতা পড়তেন।

৮.পারমাণবিক বোমাঃ

অনেকের এই ভুল ধারণা আছে যে আইনস্টাইন আমেরিকাকে প্রথম পারমাণবিক বোমা বানাতে সাহায্য করেন। কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। আইনস্টাইন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে পারমাণবিক বোমা নিয়ে গবেষণা শুরু করার জন্য আহ্বান জানিয়ে একটি পত্র লিখেন। আইনস্টাইনের মূল ভয় ছিল জার্মান নাৎসিদের নিয়ে। তাঁর মনে হয়েছিল নাৎসিদের আগে আমেরিকানদের হাতে পারমাণবিক বোমা আসা দরকার। আইনস্টাইনের চিঠির পর প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের নির্দেশে ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট‘ শুরু হয় যার চূড়ান্ত ফল ছিল হিরোশিমা আর নাগাসাকির ধবংসযজ্ঞ। পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা দেখে আইনস্টাইন পরবর্তীতে পারমাণবিক বোমা বিরোধী একজন মুখপাত্র হয়ে যান।

৯.গবেষণাগার ছাড়া বিজ্ঞানীঃ

নিজের তত্ত্বের মাধ্যমে তথাকথিত বিজ্ঞানের রূপ পাল্টে দেয়া আইনস্টাইন নিজে গবেষণাগারে খুব একটা যেতেন না। আইনস্টাইন ছিলেন একজন গণিতের জাদুকর। তাঁর গবেষণার জন্য গবেষণাগারের প্রয়োজন হত না। নিজের কল্পনাশক্তি এবং খাতা ও কলম দিয়েই তিনি তাঁর গবেষণা চালাতেন।

১০.আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক চুরিঃ

আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের খন্ডিত অংশ হাতে থমাস হার্ভি

আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহকে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসক থমাস হার্ভি আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক চুরি করেন। পরবর্তীতে আইনস্টাইনের ছেলের কাছ থেকে গবেষণার উদ্দেশ্যে তিনি মস্তিষ্কটি নিজের কাছে রাখার অনুমতি পান। কিন্তু প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি তাকে বহিষ্কার করে দেয়। ৪০ বছর আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের উপর তিনি নানা পরীক্ষা চালান এবং বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করেন আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের মস্তিশক থেকে ভিন্ন। কিন্তু তাঁর বেশিরভাগ দাবি ভুল বলে প্রমাণিত হয়। ১৯৯৮ সালে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের অবশিষ্ট অংশ থমাস ফিরিয়ে দেন যা বর্তমানে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার মাটার মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

Post Author: Ashfaq Niloy

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *