কৌতিনহোঃ ব্রাজিলের নতুন ত্রাতা

রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচ ইতিমধ্যেই খেলে ফেলেছে সেলেকাওরা। প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে হতাশাজনক ড্র-এর পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কোস্টারিকার বিরুদ্ধে জয় পেয়ে ছন্দে ফেরার আভাস দিচ্ছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ানরা। কোস্টারিকার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে গোল পেয়েছেন ব্রাজিল ফুটবলের বর্তমানের সবথেকে বড় তারকা নেইমার। কিন্তু বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত নিজের সেরাটা দিতে পারেননি তিনি। নেইমারের ছন্দে না থাকা সময়ে যিনি ব্রাজিল দলের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন তার নাম ফিলিপ কৌতিনহো।

পরপর দুটি ম্যাচে ব্রাজিল দলের হয়ে গোল করেছেন কৌতিনহো। সুইজারল্যান্ডের শক্ত রক্ষণ দেয়াল তিনি ভেঙ্গে দেন রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা একটি গোল দিয়ে। ম্যাচের ২০তম মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে নেয়া তার তীব্র শট ঠেকানোর সাধ্য সুইজারল্যান্ডের গোলকিপারের ছিল না। কিন্তু প্রথমার্ধে করা কৌতিনহোর গোলটি বিফলে চলে যায় যখন দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে কর্নার থেকে ব্রাজিলের জালে বল পাঠিয়ে দেন সুইজারল্যান্ডের স্টিভেন জুবের। বাকি ম্যাচে উভয় দল একাধিক সুযোগ পেলেও আর কোনো গোল হয়নি। ১৯৭৮ সালের পর প্রথমবার ব্রাজিল বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচে জয়ী হতে পারেনি। প্রথম ম্যাচে ড্র করার পাশাপাশি সদ্য ইনজুরি থেকে ফিরে আসা নেইমারের বিবর্ণ পারফর্মেন্স ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় চিন্তার কারণ।

গ্রুপ পর্বের ২য় ম্যাচ র‍্যাঙ্কিং-এর ২৩তম দল কোস্টারিকার বিপক্ষে। দল হিসেবে ব্রাজিল থেকে অনেক পিছনে থাকলেও কোস্টারিকার গোলকিপার, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পরপর ৩টি চ্যাম্পিয়ান্স লিগ জেতা কেইলর নাভাস কোস্টারিকার সবথেকে বড় ভরসার নাম। প্রথমার্ধে কিছু সুযোগ পেলেও দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল দল একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে কোস্টারিকার ডিবক্সে। কিন্তু গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী নাভাসকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছিল নেইমার, জেসুস, ফিরমিনোরা। প্রথমার্ধে জেসুসের একটি গোল অফ সাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায়, আবার দ্বিতীয়ার্ধে জেসুসের তীব্র হেডার গোল পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

নেইমার প্রথম ম্যাচের তুলনায় ভালো খেললেও পুরোপুরি ছন্দে খেলতে পারছিলেন না। একাধিক সুযোগ পেলেও নাভাসকে পরাস্ত করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন নেইমার। ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে নেইমার ডিবক্সে পড়ে গেলে রেফারি প্রথমে ব্রাজিল দলকে পেনাল্টি দেন। কিন্তু ভিএআর-এর সাহায্য নিয়ে রেফারি তার সিদ্ধান্ত পাল্টে দেন।

৯০ মিনিট শেষে যখন অতিরিক্ত ৬ মিনিট যোগ করা হয় তখনও স্কোরলাইন 0-0। আর তখনই ব্রাজিলের ত্রাতা হিসেবে উদয় হন কৌতিনহো। মার্সেলোর লম্বা পাস প্রথমে ফিরমিনো ও তারপর জেসুসের পা থেকে চলে যায় কৌতিনহোর কাছে। কৌতিনহোর ডান পায়ের দুরন্ত শটে বল পৌছে যায় কোস্টারিকার জালে।

ম্যাচের ৯১তম মিনিটের সেই গোলে ব্রাজিলের জয় একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়। তারপর ৯৭তম মিনিটে স্কোরশিটে নাম লিখান নেইমার।

বিশ্বকাপের দুই ম্যাচেই ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়েছেন কৌতিনহো। চার বছর পর পর ফুটবল দেখা ফ্যানদের কাছে কৌতিনহোর এভাবে নেইমারকে ছাড়িয়ে যাওয়া বিস্ময়কর ঠেকতে পারে, কিন্তু লিভারপুল মাতানো ও বর্তমানে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার হয়ে খেলা কৌতিনহোর খেলা আগে যারা দেখেছেন তারা জানেন যে কৌতিনহো তার দিনে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন।

অসাধারণ প্রতিভাবান এই খেলোয়াড় ব্রাজিল দলে সবসময় থেকেছেন নেইমারের ছায়ায়। তার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সব থেকে বড় সমস্যা ছিল ধারাবাহিকতার অভাব। কিন্তু বিশ্বকাপে পরপর দুটি ম্যাচে ব্রাজিল দলের সেরা খেলোয়াড় হয়ে কৌতিনহো এবার নেইমারের ছায়া থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসার আভাস দিচ্ছেন। প্রতিপক্ষ দল এখন শুধু নেইমারকে ঠেকানোর জন্য ছক কষবে না, কৌতিনহকে নিয়েও তাদেরকে আলাদা ভাবে ভাবতে হবে।

২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দল অতিমাত্রায় নেইমারের উপর নির্ভরশীল ছিল। তাই নেইমার কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ইনজুরিতে পরে গেলে ব্রাজিল দল সেমি ফাইনাল পুরোপুরি দিশেহারা হয়ে যায়। ২০১৪ সালের ব্রাজিল দলের সাথে বর্তমান দলের সবথেকে বড় পার্থক্য হচ্ছে এই জায়গাতে যে এই দল শুধুমাত্র নেইমারের উপর নির্ভরশীল নয়। নেইমারের সাথে এই দলে খেলেছে, কৌতিনহো, জেসুস, উইলিয়ান, ডগলাস কস্তা, ফিরমিনোর মত খেলোয়াড়রা। নেইমার অবশ্যই এখনো ব্রাজিল দলের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কিন্তু এই ব্রাজিল দল নেইমারকে ছাড়াও এগোতে সক্ষম। প্রথম দুই ম্যাচে কৌতিনহোর পারফর্মেন্স তারই প্রমাণ।

Post Author: Ashfaq Niloy

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *