ব্ল্যাক মেটাল: সঙ্গীতের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জগত

উম্মত্ততা! পাগলামি! যা ইচ্ছা বলতে পারেন, বলছি ব্ল্যাক মেটাল গানের কথা। এক্সট্রিম মেটাল ধারার একটি উপধারা হলো এই ব্ল্যাক মেটাল। দ্রুতলয়, তীক্ষ্ণ চিৎকার, গিটারের বিকৃত সুর এবং ড্রামসের সমষ্টি হলো ব্ল্যাক মেটাল। এর নিজস্ব বিকৃত রুপ, অমানুষিক গলা এবং নিম্নমানের শব্দ ধারণে দৃশ্যমান হয়। উগ্র এই সংগীত ধারার ইংল্যান্ডে জন্ম হলেও নরওয়েতে পায় এর স্বতন্ত্র রুপ।

৮০’র দশকের শুরুতে ব্রিটিশ ব্যান্ড ভেনমের প্রকাশিত দুটি এলবামে প্রচলিত মেটালের বাইরের ছাপ প্রথম দেখা যায়। এলবামগুলোয় উগ্র সুর এবং কথায় শয়তানের আরাধনা সরাসরি প্রকাশ পায়। ১৯৮২ সালে ভেনমের প্রকাশিত ‘ব্ল্যাক মেটাল’ এলবামের নামেই গানের এই ধারার নামকরণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে বাথোরি (Bathory) নামের সুইডেনের একটি ব্যান্ড ‘বাথোরি’ নামক এলবাম বের করে। ব্যান্ডটির গায়ক কুয়োর্থনকে বলা হয় ব্ল্যাক মেটালের স্বকীয় গায়কীয় উদ্ভাবক।

বামে ভেনম দলের সদস্যরা ও ডানে ১৯৮২ সালের “ব্ল্যাক মেটাল” এলবাম কভার

৮০’র দশকের পরের দিকে নরওয়ের ব্যান্ড ‘মেয়হ্যাম’, ‘থর্ন্স’ এর মতো কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের প্রয়াসের মাধ্যমে ব্ল্যাক মেটালের দ্বিতীয় জোয়ার এর আকৃতি স্পষ্ট হয়। মেয়হ্যাম, থর্ন্স, ইমমোরটাল, বার্জুমের মতো ব্যান্ডগুলো ব্ল্যাক মেটালের প্রাথমিক রুপ থেকে এক ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ধারা হিসেবে আবির্ভূত হয়। শুরু থেকেই এই ধারার গানের সদস্যরা খ্রিস্টান-বিদ্বেষী এবং স্যাটানিজম তাদের সংগীতের মাধ্যমে প্রচার করে যায়। এই ধারার সমর্থকরা ৯০ এর দশকে বিভিন্ন চার্চে আগুন দেয়। পরবর্তিতে ব্যান্ডের সদস্যরাও চার্চে আগুন দেয়া এবং মানুষ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়।

মেয়হ্যাম

ব্ল্যাক মেটালের কথা আসলে যেই ব্যান্ডটির নাম না নিলেই নয়, তা হলো ‘মেয়হ্যাম’। নরওয়ের অসলো শহরে ‘ইউরিনিমাস’, ‘নেক্রোবুচার’ এবং ‘মানহেইম’ নামক তিন সদস্যের সমন্বয়ে মেয়হ্যাম গঠিত হয়।পরবর্তীতে যোগ দেয় সুইডেনের ভোকাল ‘ডেড’ এবং ড্রামার ‘হেলহ্যামার’। ব্ল্যাক মেটাল পারফর্মেন্স এর অন্যতম অনুষঙ্গ লাশের মতো সাদাকালো রঙ করা এবং দেহে রক্ত লাগানো ডেডই ব্যাপক ভাবে শুরু করেন। হেলহ্যামারের মতে ডেডই সর্বপ্রথম ব্ল্যাক মেটাল সংগীত শিল্পী যে লাশের মতো রঙ (corpse paint) এর প্রচলন করেছে। কনসার্টে ভয়াবহ আবহ আনতে ডেড ছুরি ও ভাঙ্গা কাচ দিয়ে নিজের দেহ ক্ষতবিক্ষত করতেন। কনসার্টের এক পর্যায়ে শ্রোতাদের দিকে মাংস কিংবা হাড়গোড় ছুঁড়ে দেওয়া হতো। তাদের ভাষ্যে ফালতু লোক বিদায় করে শুধু খাঁটি ভক্তদের রাখতেই তারা এ কাজ করতো।

মেয়হ্যামের এই সদস্যদের মাধ্যমেই আসে ব্ল্যাক মেটাল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এলবাম ‘De Mysteriis Dom Sathanas’। এলবামটি প্রকাশের আগেই ১৯৯১ সালে ‘ডেড’ আত্মহত্যা করে। ইউরিনিমাস তাকে ঐ অবস্থায় দেখে পুলিশকে খবর না দিয়ে, একটি ডিসপজেবল ক্যামেরা কিনে আনেন এবং পারিপার্শ্বিক কিছু সজ্জা পরিবর্তন করে লাশের ছবি তুলেন। যার একটি ছবি পরে মেয়হ্যাম তাদের ‘Dawn of The Black Hearts’ এলবামের কাভার হিসেবে ব্যবহার করেন। কথিত আছে ইউরিনিমাস ডেড এর মগজ দিয়ে ‘স্টু’ রান্না করে খান এবং তার করোটির অংশ দিয়ে নেকলেস বানায়।

ডেড এর মৃত্যু নেক্রোবুচারের ওপর এমনই প্রভাব ফেলে যে সে দল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে যোগ দেয়া সদস্যদের মাঝে একজন হলো বেইজিস্ট ভার্গ।এই ভার্গ ১৯৯৩ সালের ১০ আগস্ট ইউরিনিমাসকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এই ঘটনায় জেলে যায় ভার্গ। আর Hellhammer, Attila Csihar, Necrobutcher, Teloch এবং Ghul ব্যান্ডটি চালিয়ে নিয়ে যায়। অপরদিকে জেলে গিয়ে ভার্গ জন্ম দেন ব্ল্যাক মেটালের আরেক সেরা ব্যান্ড বারযাম(Burzum)।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ব্ল্যাক মেটাল গানের চর্চা চলছে। নরওয়ের কারপেথিয়ান ফরেস্ট, ডিমু বর্গির, স্যাটিরিকন, উলভার; ইংল্যান্ডের ক্রেডল অভ ফিলথ‌, জেরুজালেমের মেলেখেশ, ইতালির অ্যাবোরিম এরকমই কিছু ব্ল্যাক মেটাল দল।

Post Author: RK Desk

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *